নিজস্ব প্রতিবেদক : ভর্তুকি নিয়ে চলা লোকসানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির শেষ নেই। এবার দুর্নীতির আরেক প্রমাণ মিলেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন অধিদপ্তরের অডিটে। কোন প্রকার বিল-ভাউচার ছাড়াই প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকার ভ্রমণ ব্যয় তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে বাণিজ্যিক বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর এমন অসঙ্গতি ধরা পড়ে পরিবহন অডিট অধিদপ্তরের এএন্ডএও ও উপদলনেতা আনোয়ার হোসেনের অডিটে। এ ব্যাপারে তিনি একটি অডিট আপত্তি জানান।
আনোয়ার হোসেনের করা অডিট আপত্তি থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের, বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম দপ্তরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভ্রমণ বিল ব্যয় করা হলেও এ সংক্রান্ত ভাউচার না পাওয়ায় সরকারের ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৮ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নিরীক্ষাকালে পর্যালোচনায় দেখা যায়, রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগের বেশ কিছু কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ সংক্রান্ত কোন রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়নি, এমনকি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিল পাসিং রেজিস্ট্রারেও বিলের কোন এন্ট্রি বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
রেলওয়ের জেনারেল কোড ৮০৭ (১) অনুযায়ী, ‘প্রত্যেক সরকারি কর্মচারি সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সেরূপ সতর্কতা অবলম্বন করবেন, যেরূপ একজন মিতব্যয়ী ব্যক্তি তার নিজের অর্থ ব্যয় করেন।’ তবে রেল কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল জীবনে এ যেন নিছকই প্রবাদ বাক্য।
এ ব্যাপারে তৎকালিন এসিও মেহেদী হাসানের (বর্তমানে এজিএম) সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ভাউচার ছাড়া বিল তোলা নিয়ম বহির্ভূত রেলওয়ের হিসাব বিভাগ কখনোই ভাউচার ছাড়া বিল পরিশোধ করেন না। সে ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা কিভাবে বিল তুলবে?
তিনি আরও বলেন, কোন কর্মকর্তা চাইলেই ভাউচার জমা দিতে পারেন না, এর জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাইন প্রয়োজন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমাদের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন তারেক মোহাম্মদ ইমরান। আমরা তার সাইন নিয়ে ভাউচার জমা দিয়ে বিল তুলেছি, তবে অডিট টিম আমাদের ভাউচারের কপি খুঁজে পাননি, যা হিসাব বিভাগে সংরক্ষিত থাকার কথা ছিল। তাহলে এখন ভুলটা কার?
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বর্তমান বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তৌষিয়া আহমেদ বলেন, অডিট আপত্তি পেয়েছি, তবে কোনো বিল ভাউচার পাইনি। শীঘ্রই পরিবহন অডিট অধিদপ্তরকে এর উত্তর দেওয়া হবে।
এদিকে, বিল-ভাউচার ছাড়া সাড়ে ১০ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ও হিসাব বিভাগে বিলের কপি খুঁজে না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিভাগের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা (ডিএফএ) সুগ্রীব চাকমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।।রেল নিজেই যেন এক দুর্নীতির আঁতুড় ঘর। এবার দুর্নীতির আরেক প্রমাণ মিলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন অধিদপ্তরের অডিটে। কোন প্রকার বিল-ভাউচার ছাড়াই প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকার ভ্রমণ ব্যয় তুলেন বাণিজ্যিক বিভাগের কর্মকর্তারা।
চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ