হাজারো যুবকের মাথায় হাত, ভিসা খুলে না— যেতে পারছে না বিদেশ!

নিজস্ব প্রতিবেদক : “আমি দুবাই যাব চাকরি করিতে/ ওরে ও কাজলী ও সুন্দরী থাক তোমরা দেশেতে। দুবাই যাব চাকরি করিতে।” বিদেশ গিয়ে পয়সা কামিয়ে একটু স্বচ্ছল-স্বাচ্ছন্দ্য জীবনের স্বপ্ন দেখা যুবকদের নিয়ে গাওয়া ভূপেন হাজারীকার সেই গানটির বাস্তবতা এখন যেন সুদূর পরাহত। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকাল জুলাই এবং আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম থেকে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৮৩৬ জন।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী অন্দোলনে প্রবাসীদের মিছিল করাকে কেন্দ্র করে বন্ধ করে দেওয়া শ্রম বাজার এখনো খুলে দেয়নি আরব অমিরাত। তার উপর শ্রমিক ভিসা দেওয়া বন্ধই রেখেছে ওমান এবং সৌদি আরব। জর্দান-কুয়েতের শ্রম বাজারের পরিস্থিতিও ইতিবাচক নয়। একমাত্র কাতার অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। চট্টগ্রামের মানুষই কর্মের খোঁজে মূলত: মধ্যপ্রাচ্যে যায় বেশি। কিন্তু নানামুখী জটিলতায় পড়ে মধ্যপ্রাচ্যমুখী শ্রমিকেরা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের তথ্যানুসারে দেখা যায়, ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরবে গেছেন ২১ হাজার ৭১৮ জন, ওমানে ১৯ হাজার ৮৭০, আবুধাবিতে ১৩ হাজার ৫০০, কাতারে ৭ হাজার ৩১, জর্দানে ৩২, কুয়েতে ৮৬১, লেবাননে ২২ জন শ্রমিক। অপরদিকে ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল সৌদি আরবে ১৮ হাজার ৯২৩, ওমানে ৩১ হাজার ৫৭৭, আবুধাবিতে ১২ হাজার ৮৪১, কাতারে ৩ হাজার ৫৬১, জর্দানে ১৬, কুয়েতে ৭০৮ জন শ্রমিক গিয়েছে। অপরদিকে চলতি বছর জুলাই মাসে সৌদি আরবে ১ হাজার ৬৬৭ জন, ওমানে শূন্য, আবুধাবিতে ৫৯৩ জন, কাতারে ৪৭৩, জর্দানে ২, কুয়েতে ১১৭ ও লেবাননে ৪ জন গেছেন।

এছাড়া আগস্ট মাসে সৌদি আরবে গেছেন ১ হাজার ৫৩ জন, ওমানে শূন্য, আবুধাবিতে ৯৭৮, কাতারে ৬২২, জর্দানে ৫ জন, কুয়েতে ১৪১ জন শ্রমিক। তবে এবছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে চট্টগ্রাম থেকেই ৩৩ হাজার ৯১৫ জনশক্তি মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হয়েছিল।

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ার এমন চিত্র চট্টগ্রামের পাশাপাশি সারা দেশেই হতাশাব্যঞ্জক। গত দুই মাসে জনশক্তি রপ্তানি কমেছে। ২০২৩ সালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১৩ লাখ ৮১ হাজার জনশক্তি বিদেশে গেছেন। কিন্তু ২০২৪ সালের প্রথম ৬ মাসে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৮ জনশক্তি রপ্তানির বিপরীতে জুলাইতে ৮৫ হাজার ৪৭৮ জন এবং আগস্টে ৬১ হাজার ৪১৩ জন শ্রমিক কাজের সূত্রে বিদেশ যেতে পেরেছেন। এতেই বুঝা যায়, গত দুই মাসে জনশক্তি রপ্তানি সারা দেশেই কমেছে।

কাতার যেতে আগ্রহী রাউজান নয়াহাট এলাকার বাসিন্দা মো আরমান বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে অনেক আগেই আমি আবুধাবি যেতে পারতাম। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। পরিস্থিতির কারণে আমি আটকে গেছি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের অনুরোধে প্রবাসে আন্দোলন করার দায়ে কারাদণ্ড প্রাপ্তরা যেমন মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন, তেমনি উনার অনুরোধ এবং কূটনৈতিক দৃঢ়তায় আবুধাবিসহ মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানির অচলাবস্থার অবসান হতে পারে।

চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ

Scroll to Top