সরোজ আহমেদ : আবাসিক গ্রাহকদের জন্য এক লাফে ৩০ শতাংশ পানির দাম বাড়ানোর তোড়জোড় করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। শতভাগ সরবরাহ নিশ্চিত না করেই পানির দাম বাড়ানো অযৌক্তিক বলে মনে করছেন গ্রাহকরা। তবে ওয়াসার দাবি, বেতনের খরচ মেটানো, প্রকল্পের টাকা পরিশোধ করার জন্যই দাম বাড়ানো হচ্ছে।
এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সবশেষ পানির দাম ৩৮ শতাংশ বাড়িয়েছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। সে সময় আবাসিকে ৩৮ শতাংশ ও বাণিজ্যিকে ১৬ শতাংশ দাম বাড়ায় তারা। তবে এখনও নিশ্চিত হয়নি শতভাগ সুপেয় পানির সরবরাহ।
লাভে থাকা সত্ত্বেও আরেক দফা পানির দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রাহক ও বিশেষজ্ঞরা। গ্রাহকেরা বলছেন, ওয়াসা লোকসানে চললে কথা ছিল। কিন্তু সংস্থাটি প্রতিবছরই পানি বিক্রি করে লাভ করছে। ফলে পানির দাম বাড়িয়ে গ্রাহকের কাঁধে আরও চাপ সৃষ্টি করার যৌক্তিকতা নেই।
বর্তমানে আবাসিক বাসাবাড়ির গ্রাহকেরা এক হাজার লিটার পানি ১৮ টাকায় পাচ্ছেন। বাণিজ্যিক বা অনাবাসিক গ্রাহকেরা একই পরিমাণ পানির জন্য ওয়াসাকে দিচ্ছেন ৩৭ টাকা। অথচ রাজধানী শহরের আবাসিক গ্রাহকেরা ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে এক হাজার লিটার পানি কিনছেন ১৫ টাকা দরে। অর্থাৎ ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে ওয়াসার পানির দাম বেশি।
ওয়াসার বিরুদ্ধে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমন অবস্থায় পানির দাম বাড়ানো মেনে নিতে পারছেন না গ্রাহকেরা। চট্টগ্রামবাসী জানান, ওয়াসা দীর্ঘদিন যাবৎ ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহ করছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
গ্রাহকরা জানান, কিছুদিন আগে কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই ওয়াসা দাম বাড়ায়। এর পরও পানির মান ভালো হয়নি। এখন যদি আবার দাম বাড়ানো হয়, তা ভালো হবে না।
জানা গেছে, লাভে থাকায় সংস্থাটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস বা প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছে। গত বছর নিয়মিত বেতন-ভাতার বাইরে দুটি করে মূল বেতন বিশেষ পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। যা ওয়াসার বিলাসিতা বলে মন্তব্য করেছেন নগরবাসী। ঢাকা ওয়াসার পানির দামের তুলনায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম থাকা সত্ত্বেও আরও দাম বাড়িয়ে গ্রাহকের খরচের বোঝা বাড়ানোর মনোভাব থেকে সরে আসার দাবি জানান তারা।
দাম বাড়ানোর সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে গত ২৭ মার্চ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে, আবাসিকে ৩০ শতাংশ ও বাণিজ্যিকে ৫০ শতাংশ পানির দাম বাড়ানো যেতে পারে। এই প্রতিবেদন বোর্ডে অনুমোদন হয়ে এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, প্রতি হাজার লিটার পানির বর্তমান দাম ৩২ টাকা। সেখানে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ১৮ টাকা। এ কারণে সঠিকভাবে বেতনের খরচ মেটানো, প্রকল্পের টাকা পরিশোধ করার জন্য পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া লাগছে।
পাঁচ অর্থবছরে যত লাভ
২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী সংস্থার নিট মুনাফা বা লাভ ছিল ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৮ কোটি ৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ২১ কোটি ১৯ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৯ কোটি ৮৪ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬১ কোটি ৯৩ লাখ নিট মুনাফার হিসাব দেওয়া হয়েছে ওয়াসার বাজেট প্রতিবেদনে।
ওয়াসার এক নথিতে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০৮ কোটি ৫৪ লাখ ৯ হাজার টাকা, মোট রাজস্ব ব্যয় ২৪৯ কোটি ৪৩ লাখ। ফলে সংশোধিত বাজেটে মোট লাভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ কোটি ১০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলনে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। মোট রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭০ কোটি ৪ লাখ টাকা। ফলে প্রাক্কলিত বাজেটে মোট লাভের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৭৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। নিট লাভের পরিমাণ ১১ কোটি ১১ লাখ টাকা।
লাভে থাকায় সংস্থাটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস বা প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছে। গত বছর নিয়মিত বেতন-ভাতার বাইরে দুটি করে মূল বেতন বিশেষ পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক সংযোগ ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। নগরের প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ