চট্টগ্রাম ওয়াসায় দুর্নীতির কথা স্বীকার করলেন এমডি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চট্টগ্রাম নগরীতে ক্রমেই বেড়ে চলেছে সুপেয় পানির দুর্ভোগ। এই নিয়ে এবার দায় স্বীকার করলেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ.কে.এম ফজলুল্লাহ। সেইসাথে চট্টগ্রাম ওয়াসায় অনিয়ম-দুর্নীতির কথাও স্বীকার করলেন ওয়াসা এমডি।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত গণশুনানি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ভুক্তভোগী এক গ্রাহকের প্রশ্নে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, “সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো ওয়াসা তেও অনিয়ম রয়েছে, তবে তা সহনীয় পর্যায়ে। গ্রাহক হয়রানি কমিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় চট্টগ্রাম ওয়াসায় অনিয়মের পরিমাণ অনেক কম। আমাদের দরজা খোলা আছে, যেকোনো সময় যে কেউ আমাদের কাছে আসতে পারে। আমার কাছে এসে যদি কেউ প্রতিকার না পায়, তাহলে বলার সুযোগ থাকে আমি দুর্নীতিতে জড়িত আছি। কিন্তু আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি”

এই বিষয় নিয়ে চাটগাঁ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ.কে.এম ফজলুল্লাহ বলেন, “চট্টগ্রামে শিল্প কারখানা দিন দিন ক্রমবর্ধিত হচ্ছে। অনেক বিদেশি কোম্পানিও এখানে এসে ইন্ডাস্ট্রি গড়ছে। অন্য দিকে বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষ এখানে এসে বসতি গড়ছে। ফলে মানুষের সাথে সাথে দিন দিন পানির চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের বর্তমানে যে দুটো প্ল্যান্ট রয়েছে ওখানে সুপেয় পানি আমরা পাচ্ছিনা। কারন জোয়ারের সময় নোনা পানি ডুকে যাচ্ছে বলে দিনের বেশিরভাগ সময় আমাদের প্ল্যান্ট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে কাপ্তাই থেকে যে পানি পাহাড় থেকে নামছে রাঙ্গুনিয়া অংশে সেখানে পানির সাথে ময়লা, কচুরিপানা, শেওলা মিশ্রিত হওয়ায় আমাদের ফিল্টার গুলো যেখানে দিনে ৪ বার পরিষ্কার করতে হতো সেখানে এখন দিনে ১০ বার ও পরিষ্কার করতে হচ্ছে। অনেক সময় পরিষ্কারের পরেও ফিল্টার গুলো আঠালোযুক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে ঐ ফিল্টার গুলোও বারবার চেইঞ্জ করতে হচ্ছে। সুতরাং সেটাও একবারে হচ্ছে না, প্ল্যান্ট গুলো বারবার সংস্কার মেরামতেও আমাদের সময় যাচ্ছে”
এই বিষয়ে তিনি আরো বলেন, “ওয়াসার পানি মূলত দুইটি নদী থেকে তোলা হয়। শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় পানির স্রোত কম থাকে। অন্যদিকে সমুদ্রের নোনা পানি ওপরে উঠে আসে। ফলে লবণাক্ততা বাড়ে। প্রাকৃতিক এসব সমস্যার কারণে মিষ্টি পানির সংকট হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে আরও একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। পাশাপাশি কাপ্তাই লেকে ড্রেজিং করার প্রস্তাব দেন তিনি”

এর আগে লিখিত বক্তব্য দেন ওয়াসা এমডি ফজলুল্লাহ। এসময় তিনি চট্টগ্রাম ওয়াসার চলমান ও সদ্য শেষ হওয়া প্রকল্পগুলোর সর্বশেষ অবস্থা সবার সামনে তুলে ধরেন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে ওয়াসার সেবার মান বাড়বে বলে তিনি জানান।

এ.কে.এম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। ২০০৯ সালের ৬ জুলাই চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১১ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসাতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান এ.কে.এম ফজলুল্লাহ। সেই থেকে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

গণশুনানিতে ওয়াসার বোর্ড সদস্য, প্রধান প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এইসময় চট্টগ্রাম ওয়াসার অনেক গ্রাহক পানির বিল নিয়ে অভিযোগ জানালে তা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।

 

Scroll to Top