নিজস্ব প্রতিবেদক : হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে আজ বুধবার চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পুলিশের বাধা ভেঙে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আদালত চত্বরেও প্রবেশ করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। শিক্ষার্থী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালত ভবনের সোনালী ব্যাংকের সামনে জড়ো হন। সেখানে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা ওপরে উঠতে তাঁদের বাধা দেন। তখন দুপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এসময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালত ভবনের জহুর হকার্স মার্কেট–সংলগ্ন ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। এ সময় ফটকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। শিক্ষার্থীরা আদালত ভবনের ফটকের পাশে জেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় ওই এলাকায় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশের বাধা অতিক্রম করে দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা আদালত চত্বরে অবস্থান করছিলেন। এ সময় এনেক্স ভবনের সামনে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা বিক্ষোভকারীদের বাধা দেন। সে সময় কয়েকজনকে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা বেড়ে যায়। শিক্ষার্থীরা নানা রকম শ্লোগান দিয়ে আদালতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। সে সময়ে সমগ্র আদালত শিক্ষার্থীদের দখলে চলে যায়। আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা পিছু হটে। ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি সফল করতে আদালতে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আদালত ছেড়ে যেতে চাইলে নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দেয়। শিক্ষার্থীরা দাবি করতে থাকে আদালত থেকে বের হলে সরকারদলীয় সমর্থকরা তাদের উপর হামলা চালাতে পারে। সে সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সহায়তা চায়।
তখন চট্টগ্রাম আইনজীবি সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফির নেতৃত্বে ৬ জন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। সেখানে প্রশাসনের সাথে কথা বলে তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আদালত ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা জানান। চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হক নিরাপত্তার কথা নিশ্চিত করেন এবং কাউকে গ্রেফতার করা হবে না বলে নিশ্চিত করেন।
সাড়ে চার ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা নগরীর কোতোয়ালি এলাকায় অবস্থিত আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সরে যান। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আদালত ছেড়ে চলে যাওযার পরে আওয়ামীপন্থী আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর নেতৃত্বে আইনজীবীরা এসে পাল্টা বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বদিউল আলম স্মারক ব্রিজের নিচে আর আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা সোনালী ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেন। কয়েক দফায় বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তবে কেউ আহত হননি।
ঘটনাস্থলে থাকা নগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এ এন এম হুমায়ুন কবির বলেন, আন্দোলন শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যাতে ফিরে যেতে পারেন সেই দাবি জানান। পথে তাঁরা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন। পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করার পর শিক্ষার্থীরা সরে যান। কোনো ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলা সহসমন্বয়ক ঈশা দে বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম কোটার যৌক্তিক সংস্কার। কিন্তু যৌক্তিকভাবে হয়নি। জেলা ও নারী কোটা পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বৈষম্য রয়ে গেছে। আমরা এর যৌক্তিক সংস্কার চাই। পাশাপাশি সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও আগের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন চাই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
চাটগাঁ নিউজ/এআইকে/এসআইএস