ঘরের ময়লা রাস্তায়, নগরবাসী যাবে কোথায়!

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ডোর টু ডোর বর্জ্য কালেকশন সিস্টেমের মাধ্যমে নগরের প্রতিটি বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে তা সংশ্লিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফরমেশন সিস্টেম) এ জমা করার কথা। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে তার ঠিক উল্টো। কর্মীরা বাসা বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে তা সড়ক ডাস্টবিনে জমা করছেন। এমন অবস্থায় ময়লার দুর্গন্ধে সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠছে। এতে নগরবাসীর চলাচলের সমস্যা সৃষ্টির পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

চসিকের তথ্যমতে, পরিচ্ছন্ন বিভাগের তত্ত্বাবধানে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ড এলাকা থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা প্রতিদিন ২ হাজার ৩০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে। সংগৃহিত এসব বর্জ্য নগরীর ছয়টি এসটিএস-এ জমা করা হয়। এসটিএস থেকে জমাকৃত বর্জ্যগুলো চসিকের স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। নগরে চসিকের নির্ধারিত এসটিএসগুলো পতেঙ্গা বিজয়নগরে, হালিশহর সাগরিকায়, পোর্ট কানেকটিং রোডে, ২৯ নং মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে, চান্দগাঁও সিএন্ডবি এফআইডিসি রোডে এবং চকবাজার কাতালগঞ্জে স্থাপন করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকা থেকে সংগৃহিত বর্জ্য কর্মীরা নিকটবর্তী সড়কের ডাস্টবিনের মধ্যে ফেলে রাখছেন। আবার অক্সিজেন মোড় সংলগ্ন হাটহাজারী সড়কে, দুই নম্বর গেইট ষোলশহরের মাঝামাঝি সড়ক এলাকা ,চান্দগাঁও পাটানিয়া গোদা, চকবাজার, কাট্টলী সহ নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে কখনো ডাস্টবিন বা কখনো সড়কের ওপরই বর্জ্য জমা করে রাখা হচ্ছে। সড়কের ওপর এভাবে বর্জ্য জমা করে রাখার ফলে সংলগ্ন এলাকা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে গেছে। পুরো এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠেছে। ময়লার তীব্র দুর্গন্ধে পথচারী ও বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ময়লার কারণে এলাকার পরিবেশ শুধু দূষিত হয়ে উঠেছে তা নয়, এতে করে নগরবাসী স্বাস্থ্য ঝুঁকির শঙ্কায়ও ভুগছেন।

অভিযোগ রয়েছে, চসিকের পক্ষ থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মীদেরকে সংগৃহিত বর্জ্যগুলো সংলগ্ন এসটিএস-এ জমা করার নির্দেশনা দেয়া থাকলেও তারা তা মানছেন না। এক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মী, সুপারভাইজারদের দায়িত্বহীনতা ও আন্তরিকতাকে দুষছেন নগরবাসী।

চান্দগাঁও পাঠাানিয়া গোদা এলাকার বাসিন্দা সুমাইয়া জাহান অভিযোগ করে বলেন, পুরাতন চান্দগাঁও এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া এখানে হাজার হাজার লোকের বাস। আবার পাঠানিয়া গোদা এলাকার যেখানে ডাস্টবিন সেখানেই প্রতিদিন বিকালে কাঁচাবাজার বসে। রয়েছে বিভিন্ন দোকানপাট। ডাস্টবিনের ময়লার তীব্র গন্ধ সয়ে আমাদের বাচ্চাদেরকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতে হচ্ছে। লোকজনকে বাজার সওদা করতে হচ্ছে। পথ চলতে হচ্ছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। সিটি কর্পোরেশনের লোকজনই এসব ময়লা ফেলছে।

তবে কর্মীদের এসটিএস-এ ময়লা না ফেলে ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন চসিকের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা। তিনি চাটগাঁ নিউজকে বলেন, চসিক কর্মীরা জানেন কোথায় কোথায় এসটিএস স্থাপন করা আছে। তাদেরকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু তারা যদি তা না মানে, সুপারভাইজাররা যদি বিষয়টি না দেখে তাহলে সুষ্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেব। মেয়র মহোদয়ের এ ব্যাপারে কোন ছাড় নেই।

তিনি আরও বলেন, ময়লা কিছু সময়ের জন্য ডাস্টবিন এমনকি এসটিএস-এ রাখার নিয়ম। আর সড়কের ওপর থেকে ময়লার স্তুপ সরানোর জন্য আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। মেয়র মহোদয়ের ইচ্ছা প্রতিটি ওয়ার্ডেই এসটিএস স্থাপন করা। তবে স্থান স্বল্পতার কারণে আমাদের বিলম্ব হচ্ছে। তিনি সম্প্রতি লালদিঘীর পাড়স্থ খুরশিদ মহল টাওয়ারের সামনে স্থাপিত এসটিএস উদ্বোধন করেছেন।

স্থান স্বল্পতার কারণে আমাদেরকে বাধ্য হয়ে সড়কের ওপর রাখতে হচ্ছে। তবে সকালের আলো ফোটার আগেই সড়ক থেকে ময়লা সরানোর জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া আছে।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top