নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়ে আধিপত্য, প্রভাব বিস্তার ও রাজনৈতিক নানা সমিকরণে বিএনপিতে অন্তর্দলীয় কোন্দল, গ্রুপিং প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়ছে হামলা, সংঘর্ষ ও হত্যার মত অমানবিক অপকর্মে।
এদিকে, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এমতাবস্থায় এই অন্তর্কোন্দল, গ্রুপিং সমস্যা, দীর্ঘদিন মামলা-হামলা, বন্দি জীবন কাটানো সংগঠনটির শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে। একইসঙ্গে কর্মীদের প্রতি দলের দায়বদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করছেন রাজনীতিক মহল। শুধু চলতি মাসেই বিএনপির অন্তর্কোন্দলের কারণে ঘটে যাওয়া তিনটি ঘটনা চট্টগ্রামের রাজনীতি পাড়ায় ভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী ছাত্রদল নেতা জয়নাল আবেদিন ও সাজ্জাদ হোসেনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে উপজেলার কচুখাইন বাঁধের গোড়া এলাকা থেকে তাদেরকে মুমুর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনা কয়েকদিন ধরে রাউজানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একের পর এক মারামারি ও দখলের ঘটনায় রাউজানে স্বস্থির নিঃশ্বাসের বদলে সাধারণ মানুষের অস্বস্থি বাড়ছে বহুগুণে।
চলতি মাসের ২০ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত একটি টার্ফের দখল নিতে নগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসেন দিপ্তী ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. আমিনের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জোবায়ের উদ্দিন বাবু নামের যুবদলের এক কর্মী নিহত হয়। বাবু মোশাররফ হোসেনের অনুসারী বলে পরিচিতি ছিল। অবশ্য বাবুর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশাও রয়েছে বলে স্থানীয় বিএনপির অনেকেই বলেছেন।
গেল ২১ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামের সেগুনবাগিচা বাগানবাড়ি এলাকায় রেলের জায়গা দখল নিয়ে স্থানীয় বিএনপি’র দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এলাকার বিএনপি সমর্থক এরশাদসহ এতে উভয়পক্ষের অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। শনিবার রাতে নগরীর খুলশী থানাধীন সেগুনবাগান এলাকার বাগানবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
ওয়ার্ড বিএনপির সমর্থক এরশাদের সাথে ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নয়ন, খুলশী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাসান ও রেলওয়ে শ্রমিক দলের নেতা আরিফের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে চাটগাঁ নিউজকে তিনি বলেন, বিএনপিতে কোন গ্রুপিং নেই, অন্তর্কোন্দল নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধ । দলে এখন অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ ঘটছে। তারা ফায়দা হাসিলের জন্য বিএনপিতে ঢুকে এসব করছে। চান্দগাঁওয়ের ঘটনা নগর যুবদলের নেতৃবৃন্দ তদন্ত করছে। আমরা যেকোনো ধরণের ঘটনা নিয়ে সতর্ক আছি। কেন্দ্র থেকে এই ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্কোন্দল বা গ্রুপিং নিয়ে বলতে গিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বড় বড় দলগুলোতে গ্রুপিং রয়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সহিষ্ণুতা, দলের প্রতি কমিটমেন্টের অভাব, ব্যক্তি স্বার্থের প্রাধান্য, অনৈতিকতা সব মিলিয়ে কোন্দল-গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে এটি বিদ্যমান। তবে গ্রুপিং সমস্যা দল বা রাষ্ট্রের জন্য সুখকর বিষয় নয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রুপিং বা অন্তর্কোন্দল দূর করার জন্য দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে দায়িত্ব নিতে হবে। সংগঠনে রাজনৈতিক গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে। গণতান্ত্রিকভাবে একটি দলের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। এতে করে নেতাদের মধ্যে কর্মীদের প্রতি দায়িত্বশীলতা তৈরি হবে। দলের প্রতি দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/জেএইচ