কাপ্তাই প্রতিনিধি : রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার প্রশান্তি পার্ক এলাকায় গুপ্ত ধনের প্রলোভন দেখিয়ে এক ব্যক্তি বিরুদ্ধে ২৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, শিলছড়ি বালুরচর এলাকার বাসিন্দা প্রতারক সোহেল রানা প্রথমে কারও সাথে পরিচয় হলে যদি মুসলিম হয় তাহলে মুসলিমদের ধর্মীয় বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে কথা বলে। আর হিন্দু হলে হিন্দু ধর্মের দোহাই দিয়ে কথা বলে মানুষকে ফাঁদে ফেলায়। সাধারণ লোকজনকে প্রলোভন দেখায়। এবং পরে গুপ্ত সোনা গয়নার লোভে ফেলে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা। এমনই ঘটনা ঘটেছে কাপ্তাই নতুন বাজার এলাকার জাহানারা বেগমের সাথে।
জাহানারা বেগম বলেন, সোহেল রানা ও তার স্ত্রী সুফিয়া বেগমের সাথে ৮ বছর পূর্বে পরিচয়ের সূত্র ধরে আমাকে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উপদেশমূলক কথাবার্তা বলে আমার সাথে মায়ের মত সম্পর্ক গড়ে তুলে। প্রায় সময় আমার বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। আমরাও তার বাড়ি যেতাম। এক পর্যায়ে আমাকে ৭টি গুপ্তধন স্বর্ণের হাড়ি দেবে বলে বিশ্বাস স্থাপন করে। ধাপে ধাপে আমার কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়ে গুপ্তধন দিবে বলে কালক্ষেপন করে।
এলাকাবাসী জানান, নতুনবাজার মুদি দোকান ব্যবসায়ী তরুন কুমার দে কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা, শয়ন দাশ থেকে ৫ লাখ, রাজু মিয়ার ৩ লাখ, কালাছোগা তনচংগ্যার নিকট হতে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকাসহ মোট ২৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ও অভিযোগকারী কাপ্তাই নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা তরুণ কুমার দে বলেন, আমার দোকান থেকে কিছু টাকা চুরি হয়ে গেলে আমি সোহেলের কাছে যাই। সে আমার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নেন। টাকা নিয়ে বলে ৩-৫ দিনের মধ্যে আপনার টাকা আপনার ঘরে এসে দিয়ে যাবে। ৫দিন পরে আমি সোহেলকে ফোন দিলে সোহেল বলে আমার ঘরে আসেন। ফোনে আমাকে তার ঘরে যেতে বলেন। আমি সোহেলের ঘরে যাই। তখন তিনি আমাকে বলেন, ভাই এই সামান্য টাকার জন্য এগুলো করে লাভ কি। আপনার ভাগ্যে অনেক কিছু আছে। আপনার ছোট মেয়ের নামে কোটি কোটি টাকা আছে। আপনি ১০টা বস্তা নিয়ে আসবেন। পরে একদিন আমি কোটি টাকা আনার জন্য ১০টি বস্তা নিয়ে যাই। সে আমার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা হাতিয়েছে।
আরেক ভুক্তভোগী মো. রাজু বলেন, আমি তো বহুদিন ধরে গাড়ি চালাই। এই সূত্র ধরে সোহেলের সাথে পরিচয়। এক দিন সোহেল আমাকে বলে ভাই আমি তো আল্লাহরদান স্বর্ণের কলসি পেয়েছি। তবে এই গায়েবি ধন স্বর্ণের কলসি পেতে হলে ২ জন মুসলিম ও ২ জন হিন্দু লোক মিলে টাকা পয়সা খরচ করে এ স্বর্ণের কলসি নিতে হবে। সে আমাকে দিয়ে ভুয়া ব্যাংক একাউন্ট ও ভুয়া ক্রেডিট কার্ড বানিয়েছে। এই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নাকি এই স্বর্ণ বিক্রির টাকা তুলতে হবে। এছাড়া সে আমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকার চেক নিয়েছে। আমি এই প্রতারকের সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে রবিবার বিকেলে সোহেল রানার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী কলটি ধরেন। এসময় তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রাজু, শয়ন, জাহানারা ও তরুণ কুমার আমার স্বামীর বিরুদ্ধে যে সব কথাবার্তা বলছে তার কোন প্রমাণ নেই। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুয়া। তারা আমাদের পরিবারের মানসম্মান হানি করতে এসব অভিযোগ তুলছে।
কাপ্তাই থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, সোহেলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা সাক্ষ্য প্রমাণে যদি সত্যতা পাই, তবে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ