গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নারী পোশাক শ্রমিক নিহত

সিপ্লাস ডেস্ক: পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে বুধবার সকালে এক নারী পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

নিহত পোশাকশ্রমিকের নাম আঞ্জুয়ারা খাতুন (৩০)। তিনি কোনাবাড়ীর ইসলাম গার্মেন্টসে সেলাই মেশিন অপারেটর পদে কাজ করতেন।

সংঘর্ষে আঞ্জুয়ারা খাতুন প্রথমে গুরুতর আহত হলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ বাচ্চু মিয়া।

“সকালে গাজীপুর থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় দু’জনকে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসক ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করেন,” বলেন তিনি।

আহত অপরজন বর্তমানে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে বাচ্চু মিয়া জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গণমাধ্যমকে নারীশ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

“গার্মেন্টস শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে তারা নিরাপদ স্থানে সরে যায়। কিন্তু হঠাৎ এক নারী শ্রমিক মাথায় গুরুতর আঘাত পান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে তিনি মারা যান।”

দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “গাজীপুরে সংঘর্ষে শ্রমিক নিহতের খবর শুনেছি আমরা।”

আশুলিয়ায় কিছু কারখানায় বিক্ষোভ চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

গতকাল তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য মালিকপক্ষের প্রস্তাব করা ১২ হাজার ৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরিই চূড়ান্ত করে নিম্নতম মজুরি বোর্ড। তবে এ মজুরি বিক্ষোভরত শ্রমিকদের দাবির প্রায় অর্ধেক ফলে শ্রমিকেরা এতে সন্তুষ্ট হননি।

বুধবার সকাল থেকেই গাজীপুরের কোনাবাড়ী, জরুন, বাইমাইল সহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে; পরে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ এসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।

পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটের আঘাতে অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে দাবি শ্রমিকদের।

প্রসঙ্গত, ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে গত সপ্তাহখানেক যাবত দেশের পোশাকশ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছেন। অন্যদিকে মালিকপক্ষ প্রথমে ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল।

এ নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরের কয়েকটি শিল্পাঞ্চলে পুলিশ ও তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত দুইজন নিহত এবং প্রায় ৪০ জন আহত হয়।

পরে ঢাকার আশুলিয়ায় ৩টি কারখানা ভাঙচুর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধরের অভিযোগে আশুলিয়া থানায় পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ।

মামলাগুলোতে উসকানি ও ভাঙচুরের অভিযোগে শ্রমিক সহ দেড় হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

২০১৩ সালে পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি ৭৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করেছিল নিম্নতম মজুরি বোর্ড। এরপর ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি তার চেয়ে প্রায় ৫১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করা হয়।

Scroll to Top