চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : আয় না থাকায় বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার আটটি স্থলবন্দর বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেডসহ বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শনের পর এক নম্বর জেটিতে উপস্থিত সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে সারা দেশে আটটি স্থলবন্দরের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো দেশের মানুষের উপকারে তেমন কাজে আসছে না। এসব বন্দরকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে জানিয়েছেন স্থলবন্দরের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা। প্রভাবশালীদের তদবির বা চাপে সেগুলোকে বন্দর ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ওই আটটি স্থলবন্দরের মধ্যে ছয়টির কার্যকারিতা নেই। কয়েকটির ভারতীয় অংশে কোনো স্থাপনাও নেই। অথচ এসব স্থলবন্দর নির্মাণে এ পর্যন্ত অন্তত সাড়ে চারশ কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। প্রায় ৮৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। নির্মাণ করেছে বিশাল বিশাল অবকাঠামো। স্থলবন্দর হিসাবে ব্যবহার না থাকায় এসব অবকাঠামো এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর জানতে পারলাম অনেক স্থলবন্দর জনগণের উপকারে আসছে না। অথচ সেখানে বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। ওইসব বন্দর এখন দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আমি আটটি স্থল বন্দরকে শনাক্ত করেছি, যার একপাশে কোনো আমদানি নেই। ১০ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু এক পয়সারও আমদানি নেই। আমরা রাজস্ব থেকে সেখানে খরচ করছি। যেসব বন্দর মানুষের কাজে লাগছে না, সেগুলোর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে দিয়েছি। ওই কমিটিতে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি আছেন। ওই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে একটি স্থলবন্দর করার কথা জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘টেকনাফে আমাদের একটি বন্দর আছে মিয়ানমারের সাথে। ওখানে কিছু আমদানি হয়। সে জায়গাটি একটু দেখব। একইসঙ্গে ঘুমধুম নামে একটি জায়গা আছে। সেখানে আরাকান ও রাখাইনের সঙ্গে আমাদের ল্যান্ড কানেকশন। ভবিষ্যতের দিকে নজর রেখে দেখব যে সেখানে একটি স্থল বন্দর করা যায় কি না।’
‘আগামীতে মায়ানমারের মধ্যে যা হোক না কেন, রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল এবং থাকবে। যেহেতু রোহিঙ্গারা সেখানে থাকে। যদি দরকার হয় সেখানে একটি পোর্ট করব। টেকনাফ পোর্টটি আমরা স্থলবন্দর বললেও সেটা কিন্তু সেটা না। এটা হয়তো নৌবন্দরে পরিণত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা বিগত ছয়মাসে অনেক বেড়েছে। আমি আশা করি আগামীতে আরও বাড়বে। সেজন্য আমাদের জায়গা দরকার। আপনারা দেখেছেন কনটেইনার কি রকম জট হয়ে গেছে। নিলামে সেগুলো চলে গেলে কিছু জায়গা হবে। বন্দর কেন্দ্রিক প্রচুর বিনিয়োগ আসছে। বিশেষ করে বে টার্মিনাল, লালদিয়া। লালদিয়ার পাশে আরেকটি নেওয়ার জন্যও ডেনমার্ক আলাপ আলোচনা করছে। আশা করি আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে একটি চুক্তি হবে। বিশ্বব্যাংকের ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আছে এখানে। আমার কাছে মনে হয় এটাই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ এর মধ্যে। বন্দরে বিনিয়োগ হওয়া মানে এ অঞ্চলের উন্নতি এবং লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া।’
সাখাওয়াত বলেন, ‘ইতিমধ্যে মংলা পোর্টকে আপগ্রেড করার চেষ্টা চলছে। ওই বন্দরকে আমরা একটি উন্নত মানের পোর্টে আনতে যাচ্ছি। সেটার জন্য আমাদের একটি চীনা প্রকল্প পাস হয়েছে। আশা করি, সেটির কাজ দ্রুতই শুরু হবে। সে প্রকল্পে প্রায়ই ৬০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। বাংলাদেশে এর আগে কখনও এরকম হয়েছে কি না আমার জানা নেই।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাতারবাড়ি, বে টার্মিনালসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনার প্রশ্নের সঙ্গে আমি একমত হতে পারলাম না। থমকে যায়নি। মাতারবাড়ি পোর্ট তো চলছে। আপনারা সেটা গিয়ে দেখেন। মাতারবাড়ি পোর্ট জাপান করছে। আর জাপানিরা জানেন আমাদের মতো না। ওরা কোনো কাজ থমকে রাখে না। মাতারবাড়ি পোর্ট ২০৩০ সালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ শুরু করবে। বাকিগুলোর ব্যাপারে আপনারা আগস্টের মধ্যে ভালো খবর শুনতে পারবেন।’
এসময় চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান ও সচিব ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ