নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পর্যাপ্ত মওজুদ থাকার পরও কোরবানির ঈদের আগে সব ধরনের মসলার দাম বেড়ে গেছে। বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিবছর দাম বাড়িয়ে দেন।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অথচ চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই ৩২ হাজার ১৭০ টন লবঙ্গ, ২৯ হাজার ৬৪৬ টন গোলমরিচ, ৪১ হাজার ৩৪৬ টন জিরা, ২৪ হাজার ২৬৭ টন এলাচ আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ ঘনিয়ে আসতেই মসলার দাম বাড়িয়ে দেয় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হলে কিছুদিন ঠিক থাকে এরপর আবার দাম বাড়িয়ে দেয় তারা। কোনোভাবেই যেন এসব ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
সকালে খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, খাতুনগঞ্জে ভুটানের বড় দানার এলাচ চার হাজার টাকা, গুয়াতেমালার মাঝারি দানার এলাচ ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ার ছোট দানার এলাচ প্রতি কেজি ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, জয়ত্রি ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার, জিরা ৭৫০ থেকে ৮০০, গোলমরিচ ৭৮০ থেকে ৮৫০ টাকা, জায়ফল ৭০০ থেকে ৭৬০ টাকা এবং কিশমিশ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকায়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বেশিরভাগ মসলার দাম এবার ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এলাচের দাম। এছাড়া বেড়েই চলেছে দারচিনি, আদা, রসুন, হলুদসহ প্রায় সব মসলার দাম।
বাজারে প্রতি কেজি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। মানভেদে এক কেজি আদার দাম পড়ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায়। ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। মানভেদে এক কেজি শুকনো মরিচের দাম পড়ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার কারণ হিসেবে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি, এলসি খুলতে অনীহাকে দায়ী করছেন।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক ফারুক আহমদ বলেন, মসলার আমদানি শুল্ক বেশি। মসলা আমদানি করতে গেলে ৫১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। তাই দাম বেড়েছে।
চট্টগ্রাম মসলা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি অমর কান্তি দাস বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অধিকাংশ মসলা আনা হয়। সেখানে দাম কমলে আমাদের এখানে কমে। যদি ভারতে দাম বেড়ে যায়, তাহলে খাতুনগঞ্জেও দাম বেড়ে যায়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ অপেক্ষায় থাকেন। ঈদ ঘনিয়ে আসতেই মসলাসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ানোর পেছনে ব্যবসায়ীদের অজুহাত থাকে। এখন শুল্ক বেশি বা ডলারের দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ ঘাটতির কথা বলছে তারা। প্রশাসনের কঠোরতার অভাব ও নিয়মিত বাজার তদারকি না থাকার কারণেই ভোক্তাকে বাড়তি দামে মসলা কিনতে হচ্ছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস