চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রশাসনের অভিযানেও থামছে না ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) স্লিপ কেনাবেচার দৌরাত্ম্য। এতে বার বার প্রতারিত হলেও ব্যবসায়ীদের হুঁশ ফিরছে না। সম্প্রতি নাজিম উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এলাচের ডিও বিক্রির ৭৫ কোটি টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এলাচের ডিও কিনে প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী এখন পথে বসার উপক্রম।
এই ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে খাতুনগঞ্জে। তবে এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। যদিও পুঁজি হারিয়ে পথে বসা ব্যবসায়ীরা ধন্না দিচ্ছেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের কাছে।
প্রতারণার শিকার একাধিক ভুক্তভোগী জানান, সোনামিয়া মার্কেটের শেষপ্রান্তে ছোট্ট একটি কক্ষে মেসার্স নূর ট্রেডিং নামক ট্রেডিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলাচের ডিও বিক্রি করে আসছেন নাজিম। আমদানিকারকদের কাছ থেকে বাকিতে এলাচ কিনে স্লিপ বেচে টাকা নগদ করে নেন তিনি। গত ৪ জুন থেকে এলাচের সরবরাহ বন্ধ করে দেন তিনি। এতে সন্দেহ বাড়তে থাকে ভুক্তভোগীদের।
এরমধ্যে পণ্য না পেয়ে ক্রেতারা ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলে নাজিমের ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় চেক ফেরত আসতে থাকে। ৫ জুন ৫ কোটি টাকার এলাচ বিক্রি (ডিও স্লিপ) করে কয়েক মিনিটের মধ্যে সেই অর্থ বোন জামাই টিপুর একাউন্টে স্থানান্তর করেন নাজিম। এতে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। বিষয়টি খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের নেতাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ী নেতারা অভিযুক্ত নাজিমকে এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখেন। ৫ জুন সন্ধ্যা থেকে সারারাত আটক রাখার পরদিন বোন জামাই টিপু হাজির হয়ে এসোসিয়েশনের নামে ১০ কোটি টাকার একটি চেক দিয়ে নিজ জিম্মায় নাজিমকে ছাড়িয়ে নেন। পরে ওই চেকও প্রত্যাখ্যান হয়।
বদিউল আলম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি ২ টন এলাচির ডিও বাবদ ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমার মতো অসংখ্য মানুষ নূর ট্রেডিংয়ের এলাচি কিনেছেন। এমনকি আমার শ্যালকও তিন টন এলাচির টাকা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বেশ বড় অংকের টাকা। তবে ভুক্তভোগীদের প্রকৃত সংখ্যা আমি জানি না। যারা তাকে আটক রেখেছিলেন, তারা আমাদের কিছু বলছেন না। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি, মঙ্গলবার বা বুধবার এটা সমাধানের জন্য বসবে সবাই।
ভুক্তভোগী একাধিক ব্যবসায়ীর দাবি, বিষয়টি সমাধানে ৫ জুন অভিযুক্ত নাজিমকে ডেকে নিয়েছিলেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের পরিচালক আলমগীর পারভেজ। তবে অভিযুক্ত নাজিমকে ডেকে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। অন্যদিকে প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক আলমগীর পারভেজ বলেন, নূর ট্রেডিংয়ের মালিকের লাপাত্তা হওয়ার ঘটনায় কত জন কী পরিমাণ টাকা পাবেন তার সঠিক হিসাব বা তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। এ বিষয়টি সমাধানের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি কাজ করছে।
জানতে চাইলে এলাচ কাণ্ডের ঘটনায় কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, এখন পর্যন্ত যতটুকু জেনেছি, নাজিম উদ্দিন ৭৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। এই ঘটনায় অনেকেই পথে বসার উপক্রম হয়েছেন। ডিও ব্যবসার পুরোটাই অবৈধ, এটার মাধ্যমে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ন ও মানুষ প্রতারিত হচ্ছে বার বার।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ