উজ্জ্বল দত্ত : কোন কাজই ছোট নয়। পৃথিবীতে বড় হওয়া অনেক খ্যাতিমানের অতীত জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ছোটখাট কোন কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেই কেটেছে তাদের অতীত। এমন উদার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী স্বউদ্যোগে শুরু করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসা। চবি’র ক্যাম্পাসে তারা বিক্রি করছেন শীত পিঠা, ঝালমুড়ি, বিরানী, কাপড়-চোপড় থেকে শুরু করে নানা ধরণের পন্য সামগ্রী। উপার্জিত আয়ে তাদের চলছে লেখাপড়া ও অধ্যয়নের খরচ।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘সিইউ ভয়েস’ নামের একটি পেজে চবি’র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়ার ক্যাম্পাসে বসে পিঠা বিক্রির একটি ছবি পোস্ট করা হয়। এই ছবিটি ভাইরাল হলে সর্বমহলে তার এমন উদার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই এই পোস্টের কমেন্ট বক্সে তুলে ধরেছেন নিজেদের মতামত। সুমাইয়ার এমন উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক শিক্ষার্থীই আত্ম কর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ নাছার উল্লাহ খান কমেন্টে উল্লেখ করেন, স্যালুট তোমাকে; আশা করছি খুব শীঘ্রই সচ্ছলতা ফিরে আসবে এবং এটি ব্যাপক মার্কেট পাবে ইনশাআল্লাহ। সবাই কে পিঠা খেয়ে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করছি অগ্রজ হিসেবে। ধন্যবাদ।
চবি’র ইংরেজী বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আবরারুল হক মন্তব্য করেন, কোনো কাজ ছোট নয়, নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে কঠোর পরিশ্রম শুরু করা সম্মানের। সফলতার পেছনে থাকা অনেক বড় ব্যক্তিত্বের গল্পও ঠিক এমন। যেমন, জ্যাক মা প্রথম জীবনে রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ করেছেন, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ‘আলিবাবা’ প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বজয় করেছেন। সুমাইয়ার মতো সাহসী প্রচেষ্টা আমাদের দেখিয়ে দেয়, কঠোর পরিশ্রম আর নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকলে শূন্য থেকে চূড়ায় পৌঁছানো সম্ভব। স্যালুট তোমাকে, সুমাইয়া!
চবি’র নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম হক লিখেছেন, এরকম ২০+ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছোটো ছোটো স্টল, ফুডকার্ড আছে স্টেশনে। ক্লাস,এক্সামের ফাঁকে ফাঁকে প্রতিদিনই প্রায় বসে তাদের বিজনেস নিয়ে। তাদের কাছে যান। গল্প শুনুন, খাবার,পণ্য কিনুন। আপনার অংশগ্রহণ তাদের পথচলার অনুপ্রেরণা।
‘ফিরে আর আসবো না’ নামের একটি ফেসবুক পেজে উল্লেখ করা হয়, আমাদের চর্চাটা এমন হয়েছে যে আমি পড়াশুনা করে বড়ো একটা চাকরি নিবো। এর বাহিরে আমি কিছুই করবো না, তাহলে আমার ইজ্জত চলে যাবে। আমি ছেলে হই মেয়ে হই সব কাজ করার মত সাহস, মনোবল এবং ইচ্ছে থকতে হবে এবং জীবনের প্রয়োজনে করতেও হবে। তাহলে নিজেরও কল্যান হবে এবং দেশও এগিয়ে যাবে।
চবি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পড়ালেখা, ক্লাস পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে চবিয়ান অনেকেই হাত খরচ ও নিজের ভরণপোষনের জন্য ক্যাম্পাস এলাকায় বিভিন্ন খাবার, পণ্য দ্রব্য বিক্রি করেন। স্বাভাবিক ভাবে চবির বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নিজেদের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের জন্য টিউশন করে থাকেন। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের অধ্যয়ন ও হাত খরচ নির্বাহ করেন। তবে টিউশন পেয়ে থাকেন গণিত,রসায়ন,পদার্থ, কম্পিউটার সায়েন্স, মাইক্রোবায়োলজি, ইংরেজি, সঙ্গীত বা বাণিজ্য বিভাগীয় সাবজেক্টের শিক্ষার্থীরা। বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নাট্য কলা সমূহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা তেমন টিউশন সাধারণত করতে পারেন না। কেননা অভিভাবকদের কাছে গণিত ও তৎসংশ্লিষ্ট সাবজেক্ট পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের চাহিদা বেশি। এই সমস্ত বিষয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা আবার টিউশন করেই প্রতি মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করেন।
সুমাইয়ার এমন উদ্যোগ প্রসঙ্গে ‘সিইউ ভয়েস’ পেজের এডমিন চবি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চবিয়ান সুমাইয়ার এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। তার দেখাদেখি অনেকেই এখন এই ধরণের ক্ষুদ্র ব্যবসায় স্ব উদ্যোগী হয়েছেন।
এই নিয়ে ভাইরাল হওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান ২০২২-২৩ সেশনের চবিয়ান সুমাইয়া জানান, আমার রান্না কাজটা পছন্দের। ক্লাস পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে তাই আমি ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা বিক্রি করছি। নারকেল নাড়ুও বানাচ্ছি। যেমন- ১৭ তারিখ আমাদের একটা এক্সাম ছিল। এর পরে ১০/১২ দিন বন্ধ পেয়েছি। এই ফাঁকে তাই বসেছি। টিউশন পাওয়া বা পেলেও নগরে গিয়ে টিউশন করে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসার হ্যাসেল রয়েছে। আমি গুণগত মানের পিঠা বানাই। গুঁড় আনি রাজশাহী থেকে। তাই লাভটাও সীমিত।
চাটগাঁ নিউজ