রাঙামাটি প্রতিনিধি : কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ হ্রদ হিসেবে পরিচিত রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে ৬ উপজেলার সাথে জেলা শহরের যাত্রীবাহি লঞ্চ যোগাযোগ সম্পূর্নভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে ৬ উপজেলায় প্রায় তিন লক্ষ জনসাধারণ চরম দূর্ভোগে পড়েছে। ব্যাঘাত ঘটছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য পরিবহণে। প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুম এলেই হ্রদের এসব চর খননের কথা বলা হলেও আদতে বিষয়টি এখনো পড়ে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের ফাইলে।
অনাবৃষ্টি, খরা, তলদেশ ভরাটসহ পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়ে কাপ্তাই হ্রদ এখন প্রায় জীর্ণশীর্ণ জলাশয়ে রূপ নিয়েছে। নৌযান চলাচলের পথে ডুবো চর জেগে উঠায় অসংখ্য ইউনিয়নে সকল প্রকার নৌযান চলাচল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। চর জেগে উঠায় লংগদু, উপজেলা সদর বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়িতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে পানি পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
রাঙামাটি থেকে উপজেলাগুলোতে চলাচল করা লঞ্চগুলোর শ্রমিকরা বর্তমানে বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে জানিয়ে রাঙামাটি নৌ-যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিৎ দে জানান, হ্রদে পানি শুকিয়ে বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠা চরের কারনে অন্তত ৪২টি যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচল সম্পূর্নভাবে বন্ধ রয়েছে। এতে করে প্রায় ৫শ শ্রমিক বর্তমানে বেকার হয়ে পড়েছে।
এদিকে, রাঙামাটিতে আসা-যাওয়া করা যাত্রীরা জানান, বর্তমানে পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে উপজেলাগুলোর সাথে লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১৫০ টাকা ভাড়া ৭শ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। স্প্রিড বোটে করে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। এতে করে সাধারণ কৃষক ও খেটে-খাওয়া মানুষজনের অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। এসব এলাকার মানুষের যেমন করে খাদ্য সামগ্রী নিতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে, তেমনিভাবে সেসব উপজেলা থেকে আনারস, কাঠাল, আমের মতো মৌসুমি ফল বাজারে আনতে নানা দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে চাষীদের। কোন কোন ক্ষেত্রে খরচ তুলতে না পাড়ায় মৌসুমি ফল বাজারেই আনেন না চাষীরা। ওই সব উপজেলার জনগণ দ্রুত খনন করে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা বাড়ানোর দাবি করেছেন।
এই সঙ্কট সমাধানে কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ের দাবি জানিয়ে নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) রাঙামাটি জোনের সভাপতি মঈনউদ্দীন সেলিম বলেন, প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে গিয়ে এই দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। তিন মাসেরও অধিক সময় হ্রদে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এর ফলে একদিকে যেমন মালিক-শ্রমিকদের ক্ষতি অন্যদিকে যাত্রীরাও কষ্ট পান। তাই আমরা দীর্ঘ সময় ধরে কাপ্তাই হ্রদ খননের দাবি জানিয়ে আসছি। হ্রদের কিছু নির্দিষ্ট অংশ ড্রেজিং করলে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হবে, তখন নৌ চলাচলও স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কারনে আমাদের দাবিটা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে।
এদিকে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি প্রেরণের কথা জানিয়ে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, কাপ্তাই হ্রদ খননের জন্য ৯৭৭ কোটি টাকার একটি ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে যাচাই বাছাই পর্যায়ে আছে। আশা করছি অতি দ্রুত কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস