কর্ণফুলীতে ৪০ লাখ টাকার ‘স্ক্র্যাপ’ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ‘চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন লিমিটেড’ (সিআরবিসি) নামক একটি চায়না কোম্পানির প্রায় ৪০ লাখ টাকার স্ক্র্যাপ ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি ও মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর গ্রামের বিএফডিসি’র মৎস্য বন্দর এলাকায়।

এ নিয়ে ৯৯৯ এ ফোন, কর্ণফুলী থানা ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) কাছে ভুক্তভোগী পক্ষের অভিযোগ, সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও সিএমপি কমিশনার হয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছেও লিখিত অভিযোগ হয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিএমপি বন্দর জোন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আলী হোসেন ও কর্ণফুলী থানায় জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন।

জানা যায়, লোহার স্ক্র্যাপগুলো পেতে কর্ণফুলীতে দুই গ্রুপের মধ্যে তুলকালাম কাণ্ড শুরু হয়েছে। তবে যে স্ক্র্যাপগুলো নিয়ে কর্ণফুলীতে এত কাহিনী চলছে এসব ক্র্যাপগুলো পটুয়াখালী জেলার পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের।

ক্র্যাপগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাহাজ ও পন্টুনের পুরাতন প্রেইট, অ্যাঙ্গেল, লোহার প্লেট, গার্ডার ও বিভিন্ন অকেজো মালামাল রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, যার আনুমানিক ওজন ৬০ টনের অধিক। প্রতি টন স্ক্র্যাপের মূল্য ৬৫ হাজার টাকা ধরা হলে এতে ৪০ লাখ টাকার মালামাল।

যে স্ক্র্যাপগুলো দেখতে গিয়ে বিএফডিসির ইছানগর এলাকার একটি গ্রুপের কাছে মারধরের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করে কর্ণফুলী থানায় অভিযোগ করেন নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার সৈয়দ তাওরিদুল হক প্রকাশ নাদিম (৩৪)। এর আগে তিনি ৯৯৯-এ কল করে কর্ণফুলী থানা পুলিশের সহযোগিতা চান।

এ সময় ৯৯৯-এ অভিযোগ পেয়ে টহল টিমে থাকা এসআই মিজানুর রহমান তাৎক্ষণিক ভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দু’পক্ষের লোকজন, চাইনিজ কোম্পানির মুখপাত্র ও বিএফডিসির কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে কথা বলেন। বৈঠকে উঠে আসে দীর্ঘদিন ধরে বিএফডিসিতে স্ক্র্যাপের ব্যবসা করে আসছেন স্থানীয় কিছু লোকজন। হঠাৎ বাহিরের একটা গ্রুপ চাইনিজ কোম্পানি থেকে স্ক্র্যাপ ক্রয় করেছেন দাবি করে গেইট পাস নিতে গেলে হাতাহাতির শিকার হন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসআই মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি এ রকম বিএফডিসিতে কিছু স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন ধরে স্ক্র্যাপের ব্যবসা করেন। হঠাৎ বাহিরের একটা গ্রুপ স্ক্র্যাপ কিনতে আসলে স্থানীয়রা তাদেরকে দাম না বাড়াতে অনুরোধ করেন। পরদিন আবারো ওই লোকগুলো স্ক্র্যাপ কিনতে আসলে কে বা কারা নাকি তাদের মারধর করেন। পরে বিএফডিসি অফিসে আমিসহ দু’পক্ষের লোকজন বসে সমাধা দিতে চেষ্টা করেছি। এরপর কি হয়েছে আমি জানি না।’

জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২২ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৫ টার সময় তিনি ও তাঁর সহযোগী আজিজ আহমেদ চৌধুরী (৩৫) ব্যবসার কাজে চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরের ওয়ার্কশপের পাশে চাইনিজ সিআরবিসি কোম্পানির কিছু স্ক্র্যাপ মালামাল দেখতে যান। স্পটে গেলে চরপাথরঘাটার ইছানগর এলাকার সুমন মেম্বার (৩৮), পাপ্পু (৩২) ও শরিফ (২৮) তাদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিএফডিসি এলাকায় না আসার জন্য বারণ করেন।

পরের দিন পৌঁনে ১২ টায় ভুক্তভোগী সৈয়দ ও চাইনিজ কোম্পানির কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরের কর্তৃপক্ষের থেকে ছাড়পত্র নিতে গেলে মৎস্য বন্দরের ওয়ার্কসপের পাশে সহযোগী ফারুক চৌধুরীসহ (৪৩) দাঁড়ালে তাদেরকে মারধর করে প্রাণনাশের চেষ্টা করেন।

এ বিষয়ে জিডি তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘স্ক্র্যাপের যে মালামাল গুলো নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সে বিষয়ে ভবিষ্যতের জন্য জিডি করেছেন সৈয়দ তাওরিদুল হক। তবে তিনি এসব মালামাল কিনেছেন বলে কোন ডকুমেন্টস আমাকে দেখাতে পারেননি। বিষয়টি তদন্তের জন্য অনুমতি চেয়ে আমি আদালতে পাঠিয়েছি।’

এদিকে, চাইনিজ কোম্পানিটির মেকানিক্যাল ফোরম্যান মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘চাইনিজরা জানালো এই স্ক্র্যাপ নিয়ে যেহেতু অনেক ঝামেলা হয়েছে। এখন তাঁরা স্ক্র্যাপগুলো আর বিক্রি করবেন না। মালামালগুলো নিয়ে যাবেন। সেটাই বলছে আমাকে।’

বিএফডিসির ফোর ম্যান কৌশিক চৌধুরী বলেন, ‘প্রথমদিন ঘটনা ঘটনা সাথে সাথেই খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক ভাবে দৌঁড়ে স্পটে গিয়ে দুই পক্ষের লোকজনকে অফিসে ডেকে সমাধান দিতে চেষ্টা করেছি। পরে থানায় কি কি হয়েছে আমি জানি না। তবে চায়নিজদের ওই স্ক্র্যাপগুলো এখনো বিএফডিসিতে রয়েছে।’

ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ‘স্ক্র্যাপের মালামাল দেখতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন দাবি করে সৈয়দ তাওরিদুল হক নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন। আমরা ডিবি পুলিশের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দু’পক্ষের লোকজনকে ডেকেছি। আশা করি সমাধান হয়ে যাবে। অভিযোগকারী স্ক্র্যাপ কিনেছেন বলে কোন ডকুমেন্টস আমাদেরও দেখাতে পারেনি।’

এ বিষয়ে কর্ণফুলীর থানার ওসি মো. জহির হোসেন বলেন, ‘স্ক্র্যাপের মালামাল না কিনেই বিভিন্ন জায়গায় মালামাল বের করতে দিচ্ছে না বলে আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন সৈয়দ তাওরিদুল হক। আসলে ওরা যে চাইনিজ কোম্পানি থেকে স্ক্র্যাপ ক্রয় করেছেন এ রকম কোন ডকুমেন্টস এখনো দেখাতে পারেনি। তবে জিডি করেছে থানায়। আমরা তা তদন্তের জন্য আদালতে অনুমতির জন্য পাঠিয়েছি। অনুমতি আসলে তদন্ত করব। এতটুকু জানি।’

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, ‘চাইনিজ কোম্পানি সিআরবিসির কিছু স্ক্র্যাপ আছে বিএফডিসিতে। ওদের এসব মালামাল বিক্রি নিয়ে স্থানীয়দের সাথে বাহিরের লোকজনের ঝামেলা হয়েছে শুনেছি। যেহেতু আমরা এসব মালামাল ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত না। আমরা কোন মালামাল কিনিও না, বিক্রয়ও করি না। আমাদের কোন স্ক্র্যাপ থাকলে তা টেন্ডারে বিক্রি হয়।

সিএমপি বন্দর জোন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘আমি অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে ডিবি পুলিশের টিম পাঠিয়েছিলাম। জেনেছি ঘটনাটি সত্য। চাইনিজ কোম্পানির কিছু স্ক্র্যাপ ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে স্থানীয় লোকজন স্ক্র্যাপ ক্রয় করতে যাওয়া ব্যক্তিদের মারধর করেছেন। ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন ডিবি পুলিশের একটি টিম। দু’পক্ষকে ঝামেলা না করতে নিষেধ করা হয়েছে।’

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top