কাপ্তাই প্রতিনিধি: পাহাড়ে চাষ উপযোগী ফসলের জাত এবং অন্যান্য কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করাই পাহাড়ী কৃষি গবেষণার মূল কাজ। এ লক্ষে পাহাড়ি এই অঞ্চলে কৃষির উন্নয়নে ১৯৭৬ সালে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নে প্রায় ১০০ একর জমিতে গড়ে উঠে রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন ফলের জাত উদ্ভাবন করে সফলতা অর্জন করেছে এই কেন্দ্রে কর্মরত বিজ্ঞানীরা। এবার কফি এবং কাজুবাদাম চাষ এবং গবেষণা করে সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছেছে এই গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।
রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ” প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ২ নং ব্লকে প্রায় ২ একর জমিতে আমরা এরাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফি এবং কাজুবাদাম এর চাষ শুরু করি। চলতি বছরে প্রায় সবকটি কফি ও কাজুবাদামের চারায় ফলন হয়েছে।
তিনি আরোও বলেন, কফি সারা বিশ্বে ১ নম্বর অর্থকরী ফসল। গত ৩ বছর ধরে আমাদের এখানে এর চাষ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৯০ জন কৃষককে কফি ও কাজুবাদাম এর আধুনিক কলাকৌশল চাষ বিষয়ে অবহিত করার লক্ষ্যে আমরা প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। সেইসাথে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকদের মাধ্যমে ২৭ টি উপযোগিতা যাছাই করে কফি ও কাজুবাদাম এর চাষ করেছি। অধিকাংশ ব্লকে এখন কফি ও কাজুবাদাম এর ফলন ধরেছে। আমরা আশা করছি এই কফি এবং কাজুবাদাম চাষ করে পাহাড়ের অর্থনীতি বদলে যাবে।
প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ২ নং রাইখালী ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শৈবাল সরকার সাগর বলেন, আমি রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র হতে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে গত বছর ২ একর কৃষি জমিতে রোবেস্টা জাতের কফি চাষ করেছি। কিছু চারায় ইতিমধ্যে ফল এসেছে। আশা করছি আমরা কৃষকরা লাভবান হবো।
এদিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ” প্রকল্পের আওতায় রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ২ নং ব্লকে গত ১৩ অক্টোবর কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠান এবং কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড: দেবাশীষ সরকার।
এসময় তিনি বলেন, মাননীয় কৃষি মন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক কৃষি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পাবার পর পাহাড়ি অঞ্চল একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ” কফি ও কাজুবাদাম গবেষণা, উন্নয়ন সম্প্রসারণ” প্রকল্প গ্রহন করেছেন। পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালীতে অবস্থিত পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত বিজ্ঞানীরা ” কফি ও কাজুবাদাম ” চাষে কিভাবে সফলতা অর্জন করা যায়, সেই লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা গত জুন মাসে এরাবিকা ও রোবেস্টা ২ টি কফি জাত উদ্ভাবন করেছেন। এই দুইটি জাত পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এই গাছ গুলো যখন পূর্ণতা পাবে, ফলন ধরবে এবং কৃষকরা এর চাষ শিখবে তখন উচ্চ মূল্যের এই কফি গুলো দেশের চাহিদা পূরণ করে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবো।
কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কফি ও কাজুবাদাম গবেষণা সম্প্রসারণ প্রকল্পের বারি অংগের প্রকল্প সমন্বয়ক ড: আলতাফ হোসেন বলেন, এটি সরকারের কৃষি মন্ত্রানালয়ের ৫ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প। ইতিমধ্যে ৩ বছরের মাথায় এর ফলন হয়েছে। পার্বত্যঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি কফি ও কাজুবাদাম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এই অঞ্চলে যে বাগান গুলো আছে তাতে অন্যান্য ফলের পাশাপাশি কফি ও কাজুবাদাম এর চাষ করলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবো।