চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) নতুন কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেছেন আমার দরজা সবসময় সাংবাদিকসহ সবার জন্য খোলা থাকবে। যে কেউ যে কোন বিষয় বা অভিযোগ নিয়ে আমার অফিসে আসতে পারবে। শুধু আমার অফিস না, সিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তা কমিশনার এবং উপ-কমিশনারদের কার্যালয়সহ সকল দপ্তর জনসাধারণের জন্য সবসময় উন্মুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন-আমি কখন কোন থানায় যাব তা কেউ আগে জানবে না। বডিগার্ডও বলতে পারবে না। আমি সিএমপির সব থানা চিনি। সবার বাড়িও চিনি। সুতরাং আপনাদের সাথে আমার কোনো গ্যাপ থাকবে না।’
তিনি সোমবার (৮ জুলাই) আমাদের বেলা ১১টায় সিএমপির মাল্টিপারপাস শেড়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব বলেন কমিশনার সাইফুল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ পরিচয়ে কোন ব্যক্তির অপরাধের দায় পুলিশ বাহিনী নিবে না। যার অপরাধ দায়ও তার।
অপর এক প্রশ্নে নতুন কমিশনার বলেন, ‘সিএমপির ১৬ থানার ওসিদের কেউ যদি অপকর্ম করে তার দায় তাকেই নিতে হবে। সেই দায় আমি নিব না। আমি দুষ্টু গরু রাখবো না, শূন্য গোয়াল থাকবে আমার। এটা আমি নিশ্চিত করতে চাই। আমার মেসেজটা অলরেডি আমার থানার ওসিদের কাছে পৌঁছে গেছে।’
সাংবাদিকদের কাছে পরামর্শ চেয়ে নতুন কমিশনার বলেন, ‘আমাকে আপনারা গাইড দিবেন আমার প্রথম কোন কাজটা করা উচিত। আপনি কমিশনার হলে প্রথম কোন কাজটা করতেন। আর কি কি সমস্যা রয়েছে সেগুলো আমাকে জানালে এটাকে এড্রেস করতে সহজ হবে। সব জায়গায় অপরাধের ধরন ভিন্নরকম। আমি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে ছিলাম। সেখানে ধরণ একরকম। এখানে ধরণ আরেকরকম। অপরাধ নির্মূলে কাজ শুধু পুলিশ নয়, আমরা সবাই মিলে করবো। সেক্ষত্রে সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা আমি চাই।’
চট্টগ্রামের মানুষের সাথে পুরোনো সম্পর্ক উল্লেখ করে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সবাইকে আহ্বান করবো যেকোনো সময় যে কোনো জায়গায় যদি বলেন কোনো সমস্যার কথা সেটা আমি শুনবো এবং চেষ্টা করবো সমাধান করার। আপনারা জানেন, আমি এখানে ৩২তম কমিশনার হিসেবে যোগদান করেছি। এর আগেও আমি এখানে ডিসি পোর্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আবার চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ছিলাম। এই এলাকার মানুষের সঙ্গে একটা আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমার দাবিটা একটু বেশি থাকবে যেন আমি আমার দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে পারি।’
সম্প্রতি মাদরাসা ছাত্র নিখোঁজ নিয়ে ফেসবুকে পোস্টের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকেই বলা হয়েছে গুজব। এটা নিয়ে আমিও কাজ করছি। আমার কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী মোট ৮ জন প্রেম করে চলে গেছে। তাদের সবাইকে পাওয়া গেছে। অনেকে আছে পারিবারিক কারণে রাগ করে চলে গিয়ে আবার ফিরে এসেছে। এদের কেউ কিন্তু মিসিং নেই। এগুলো ফেসবুকে ফলাও করে নিখোঁজ করে প্রচার করা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ গুজব।’
ওসিদের প্রসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমি কখন কোন থানায় যাব, কোন থানার ওসিকে আমার গাড়িতে করে তুলে নিয়ে চলে আসব এর ঠিকানা নাই। সিএমপির ১৬ থানার ওসিদের কেউ যদি অপকর্ম করে তার দায় তাকেই নিতে হবে। সেই দায় আমি নিব না। আমি দুষ্টু গরু রাখবো না, শূন্য গোয়াল থাকবে আমার। এটা আমি নিশ্চিত করতে চাই। আমার মেসেজটা অলরেডি আমার থানার ওসিদের কাছে পৌঁছে গেছে। তাদের কাছে আমার প্রথম মেসেজ হচ্ছে—কি করা যাবে না। কোনটা করতে হবে সেটা এখনো বলিনি। সামনে আমাদের একটি ১০ তারিখ প্রোগ্রাম আছে সেখানে বলা হবে। আমি সেদিন আমার কি চাওয়া সেটি জানাব। আমি আমার যে চাওয়া সেটি প্রতিষ্ঠা করে ছাড়বো। আমার চাওয়ার সঙ্গে আপনাদের চাওয়া মিলবে, আমি নিশ্চিত।’
কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামে এসে শুনেছি কিশোর গ্যাংয়ের কথা। এটা নিয়ে আমি এসেই কাজ শুরু করেছি এবং আমার একটা ওয়ে তৈরি করব, আমি প্রথমে কলেজ ইউনিভার্সিটি গুলোতে প্রোগ্রাম করব। আমার ধারণা দু-একটা প্রোগ্রাম করার পরে কলেজ বা ভার্সিটির সঙ্গে থাকে তারা আর থাকবে না। অভিভাবকদের প্রতি এমন একটা অনুরোধ থাকবে আপনার সন্তান কোথায় যায় না যায় তা দেখেন। যদি আমি তাকে থানায় নিয়ে আসি তাহলে তার ক্যারিয়ারটা নষ্ট হয়ে যাবে। মানুষ বলবে, সে একটা খারাপ মানুষ। আমি চাইনা তার গায়ে একটা কালিমা লাগুক।’
থানায় জিডি না নেয়ার বিষয়ে কমিশনার বলেন, ‘আমি প্রথমেই জিডি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। সমস্ত জিডি নিয়ে এসেছি আমি। এরমধ্যে দুইটা জিনিস, ব্যক্তি নিখোঁজ এবং মোবাইল হারানো ডায়েরি। যত পুরোনো জিডি আছে আমি খুঁজে বের করতে বলেছি। সেগুলো কে তদন্ত করছে, কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে। যদি পুরোনো কোনো জিডির মোবাইল উদ্ধার না হয়ে থাকে তাহলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চুরি অথবা ছিনতাই,কি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আমি জানতে চেয়েছি।
এসময় এসময় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) আবদুল মান্নান মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ, ডিসি সদর (সম্প্রতি অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত এবং সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে পদায়নকৃত) মোঃ আব্দুল ওয়ারীশসহ সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস