সৌদি আরব প্রতিনিধি: সৌদি আরবের জেদ্দায় ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিট (#WFS) বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম বৃহত্তম ক্রীড়া প্ল্যাটফর্ম যা খেলাধুলায় সুযোগ তৈরি করতে এবং ক্রীড়াজগতে নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে বিশ্বখ্যাত পেশাদারদের সম্মিলিত করে থাকে। এই প্ল্যাটফর্ম ক্রীড়াজগতের নেতৃবৃন্দকে সংযুক্ত করে যাঁরা ব্যবসা এবং মূল্যবোধ উভয় ক্ষেত্রেই ক্রীড়াশিল্পের বিবর্তনকে এগিয়ে নেবার জন্য নিজেদের জ্ঞান ও আইডিয়াগুলি পরস্পরের সাথে শেয়ার করেন। WFS—এর নেতারা আমাদের কল্পনার ফুটবলকে মানুষের সত্যিকার প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে গড়ে তুলতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। পেশাদার ফুটবলদের এই বিশ্বব্যাপী কমিউনিটি একটি আরও টেকসই ও সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবল জগত গড়ে তোলার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিট অ্যাওয়ার্ড ফুটবলের গতিপথকে প্রভাবিত করেন এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্বীকৃতি প্রদান করে। এই বছর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হলো গত ১১ ই ডিসেম্বর ২০২৩, বিশ্ব ফুটবল সামিটের সর্বশেষ সংস্করণের প্রাক্কালে যা সৗদি আরবের জেদ্দায় ১২ থেকে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ সময়কালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বছরের সম্মাননাগুলি প্রদান করা হচ্ছে চারজন অসামান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে যাঁদের প্রত্যেকেই ফুটবল জগতের ভেতরে ও বাইরে দীর্ঘস্থায়ী ও প্রভাবশালী অবদান রেখে চলেছেন।
প্রথম সম্মাননাটি প্রদান করা হয় প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে Ñ ক্রীড়াজগতে তাঁর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তাঁর আজীবন কৃতিত্ব ও অর্জনের জন্য।
২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী, অলিম্পিক লরেল পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত প্রফেসর ইউনূস সামাজিক উন্নয়নের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ব্যক্তিত্ব। ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিট তাঁর অসাধারণ জীবনকালের বিভিন্ন কৃতিত্বকে সামনে তুলে ধরে Ñ যিনি একই সাথে নোবেল শান্তি পুরস্কার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম এবং ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত বিশ্বের সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তির অন্যতম।
অসামান্য ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেয়ার উদ্দেশ্যে নিবেদিত এই গালা অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস ও তাঁর অসামান্য সব সামাজিক অবদানের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় খেলাধুলা ও সামাজিক ব্যবসার শক্তি ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী কাজ করে যাওয়া প্রতিষ্ঠান ইউনূস স্পোর্টস হাব প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর অবদানকে এই অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে উদযাপিত করা হয়
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউনূস স্পোর্টস হাব সামাজিক ব্যবসার নীতির ভিত্তিতে সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অনুঘটক হিসেবে খেলাধুলার শক্তিকে ব্যবহার করে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ক্ষমতায়নের জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশ্ব ফুটবল সম্মেলনে প্রফেসর মুহম্মদ ইউনূসকে প্রদত্ত এই সম্মাননা কেবল পৃথিবীকে আরো সুন্দর ও বসবাসযোগ্য করে তুলতে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও আত্মনিবেদনের স্বীকৃতিই শুধু দেয়নি, বরং খেলাধুলার দিগন্তকে আরো প্রসারিত করতে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টাকেও একইভাবে সম্মানিত করেছে।
প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত সম্মাননায় উল্লেখ করা হয়, “প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস একজন অসাধারণ এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব যিনি সামাজিক পরিবর্তন আনয়নে এবং কমিউনিটিকে আরো সমৃদ্ধ করতে তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন।” অনুষ্ঠানে তাঁর নোবেল শান্তি পুরস্কার থেকে শুরু করে অলিম্পিক লরেল এবং ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের জন্যই শুধু নয়, বিশ্বমানবতার কল্যাণে তাঁর বিভিন্ন অবদানের কথাও তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং জলবায়ু সংকটের অবসান ঘটাতে খেলাধুলা এবং সামাজিক ব্যবসার শক্তিকে সম্মিলিত করতে ইউনুস স্পোর্টস হাব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ দূরদৃষ্টি। “আজ রাতে আমরা তাঁর অসাধারণ কর্ম এবং দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকারের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করছি,” সম্মাননায় আরো উল্লেখ করা হয়।
সম্মাননা গ্রহণকালে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বিশ্ব ফুটবল সামিট থেকে প্রদত্ত এই সম্মাননায় আমি সত্যিই গর্বিত। আমরা যখন খেলাধুলা উদ্যাপন করি, আসুন আমরা খেলাধুলার মাধ্যমে এর ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেবার পাশাপাশি মানুষ হিসাবে আমাদের নিজস্ব সম্ভাবনাকেও আমরা যেন চিনতে পারি -তা ব্যক্তিগতভাবে হোক বা সম্মিলিতভাবে হোক Ñ যাতে মানুষের জীবনে অর্থবহ পরিবর্তন সূচিত হতে পারে। খেলাধুলা ও তারুণ্য পরস্পর সমার্থক যা স্বপ্ন অর্জনের প্রতিশ্রম্নতি সৃষ্টি করে। খেলাধুলা তারুণ্যের অব্যবহৃত সামাজিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমাজের জন্য নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে।”
তিনি আরো বলেন, “আসুন আমরা খেলাধুলার সার্বজনীন ভাষা এবং সামাজিক ব্যবসার বাস্তব শক্তিকে এমন একটি ভবিষ্যৎ সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করি যেখানে খেলাধুলা শুধুমাত্র বিনোদন হিসেবেই নয়, বরং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং বেকারত্ব—মুক্ত একটি নতুন পৃথিবী তৈরি করতে তা নিজেকে উৎসর্গ করে। এবং যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আসুন, আমরা আনন্দের সাথে এটি করি!”
সম্মাননাপ্রাপ্ত অন্যান্যরা হলেন পেশাদার ফুটবলার এবং চিকিৎসক ডা. নাদিয়া নাদিম যাঁকে তাঁর বিভিন্ন অবদানের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া খেলাধুলার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিশুদের ক্ষমতায়নকারী দাতব্য সংস্থা #PACES — কে পুরস্কার প্রদান করা হয় যা প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি হেলেন আলুজাইজি গ্রহণ করেন এবং ফুটবল ফেডারেশনের উদ্ভাবনের জন্য এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)—কে সম্মাননা দেয়া হয় যা গ্রহণ করেন এএফসি মহাসচিব দাতুক সেরি উইন্ডসর জন