কাপ্তাই প্রতিনিধি: বারবার প্রশাসনের অনুরোধ সত্ত্বেও কাপ্তাইয়ের অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কাপ্তাই ইউনিয়ন এর ঢাকাইয়া কলোনি ও লগগেইট, ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এর মুরালী পাড়া সহ কাপ্তাই উপজেলার অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসলে অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ধ্বসে এইসব এলাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটে ।
ফলে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে প্রশাসনের পক্ষ হতে মাইকিং করে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের স্থানীয় আশ্রয় কেন্দ্রে আসার অনুরোধ জানানো হলেও অনেকে কর্ণপাত না করে বসবাস করে আসছেন এই সব ঘরে।
যার ফলে পাহাড় ধ্বসে ঘটছে দূর্ঘটনা।
সর্বশেষ গত শুক্রবার ( ৪ আগস্ট) অতি বর্ষণে কাপ্তাই ইউনিয়ন এর ঢাকাইয়া কলোনীতে একটি ঘর ধ্বসে পড়ে এবং শনিবার (৫ আগস্ট) একই ইউনিয়ন এর কেপিএম টিলা কার্গোর নীচে দানা মিয়া- ও মোঃ মনির হোসেন এর ঘরের উপর গাছ পড়ে টিন ও বাঁশ দ্বারা নির্মিত ঘর ভেঙ্গে যায়। উক্ত ঘটনায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
শুক্রবার (৪ আগস্ট ) এবং শনিবার ( ৫ আগস্ট) সকাল হতে বিকেল পর্যন্ত এই প্রতিবেদক কাপ্তাইয়ে নতুনবাজার, লগগেইট, ওয়াগ্গার মুরালী পাড়ায় সরজমিন গিয়ে দেখতে পান, এইসব এলাকায় এরকম আরো শতশত কাঁচা ঘর আছে যে কোন মুহুর্তে এগুলোও ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে অতিবৃষ্টি হলে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশংকায় ভূগছেন এখানে বসবাসকারী জনসাধারণ।
ঢাকাইয়া কলোনির বাসিন্দা মোঃ ফরিদ, নবী হোসেন, সাহারা খাতুন, ইয়াসমিন এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা মৃত্যুকে প্রতি মূহুর্তে সঙ্গী করে এইখানে বসবাস করে আসছি। কোথায় যাবো আমরা, সরকার যদি স্থায়ী ভাবে ঘর নির্মাণ করে দেয়, তাহলে আমরা সেখানে চলে যাবো পরিবার পরিজন নিয়ে।
কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ জানান , নতুন বাজার ঢাকাইয়া কলোনীতে ৫ শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। গত শুক্রবার কাপ্তাই উপজেলার নবাগত ইউএনও মো: মহিউদ্দিন সহ আমরা ইউনিয়ন পরিষদ এবং কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে তাদেরকে সতর্ক করেছি এবং নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্র কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে যাবার অনুরোধ করেছি।
ইউপি চেয়ারম্যান আরোও জানান, আজ( শনিবার) দুপুর পর্যন্ত কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৫ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে, তবে সন্ধ্যার দিকে আরেও পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আসা শুরু করেছে। তাদেরকে উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ হতে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন এর ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইমান আলী জানান, বর্ষা মৌসুম আসলে অজানা আতঙ্কে আমরা থাকি, কখন পাহাড় ধ্বসে হতাহতের ঘটনা ঘটবে। আমরা বারবার অনুরোধ করার পর অতিবৃষ্টি হলে অনেকে কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যায়, আবার অনেকে যায় না। বৃষ্টি কম হলে আবার তাঁরা এইসব ঘরে চলে যায়। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী জনসাধারণ এর জন্য স্থায়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প করে দেবার জন্য সরকারের নিকট অনুরোধ জানান।
অপরদিকে ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিরনজীত তনচংগ্যা জানান, ২০১৭ সালের ১৩ জুন ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এর মুরালী পাড়ায় অতিবৃষ্টির ফলে পাহাড় ধ্বসে একই পরিবারের ২ জন সহ মোট ৬ জন মারা যায়। আমরা এরিমধ্যে অনেক পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছি এবং সরকারের পক্ষ হতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে দেওয়া ঘর প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এর পরও অনেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছেন।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মহিউদ্দিন জানান, গতকাল শুক্রবার অতি বৃষ্টি শুরু হবার সাথে সাথে আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যদের নিয়ে অতি ঝুঁকিতে বসবাসকারী কাপ্তাই ইউনিয়ন এর ঢাকাইয়া কলোনিতে গিয়ে প্রচার প্রচারনা চালিয়েছি। তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার অনুরোধ জানিয়েছি। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্র এসেছে,
এরপরও অনেকে এইসব এলাকায় বসবাস করে আসছেন, ফলে দূর্ঘটনা ঘটছে। তিনি আরোও জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে যারা আছেন কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে তাদেরকে খাবার সহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।