নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগের রাতে ভোট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে একশ ভাগ নিশ্চিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় চট্টগ্রামে এল.জি.ই.ডি মিলনায়তনে জেলার ১৬ টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। এই সময় সাংবাদিকরা সিইসি কে অবাদ, সুষ্ঠু নির্বাচন, ভোট জালিয়াতি প্রসঙ্গে নানা প্রশ্ন করেন। উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিশ্চিত যে ভোট জালিয়াতি একেবারেই হবে না”।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে সিইসি বলেন, “আমি ছয়টি স্টেশনে ঘুরে প্রায় একটি কথা শুনেছি। অনেকে বলছে ভোট দিয়ে কী লাভ। ভোট তো এক জায়গায় চলে যাবে। আবার অনেকেই মুখে মুখে বলছেন, ভোট যে যেখানে দেন না কেনো ভোট ঠিকই জায়গামতো চলে যাবে। আমরা বিষয়টি শুনেছি। এর মধ্যে আমরা জেনে গেছি, এটি হয়তো তাদের ইচ্ছাকৃত মনগড়া অপপ্রচার অথবা ভ্রান্ত ধারণা। ভোট যেখানেই দেন সেখান থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার আশঙ্কা নেই, সেটি আমরা শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি”।
‘রাতে ভোট হবে না’ জানিয়ে তিনি বলেন, “আগের রাতে ভোটের যেসব কথাবার্তা হয়েছে আমরা ৯৯ নয় শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি, সেটি কোনো অবস্থাতেই হবে না। এজন্য অনেক কেন্দ্রে ব্যালট পেপার সকালে যাবে। এখন ব্যালট পেপার সকালে না গিয়ে ১০ দিন আগে অথবা ১০ মাস আগেও যদি যায় তাহলেও প্রার্থীরা তাদের পোলিং এজেন্ট দিয়ে সকালে ভোট কেন্দ্রে স্বচ্ছ বাক্সগুলো খালি কি না সেটি দেখে তারপর বন্ধ করবেন। সেক্ষেত্রে অবৈধভাবে কোনো ব্যালট বাক্স ঢোকার সুযোগ নেই। তারপরও আমরা বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জনের জন্য বলেছি, ব্যালট পেপার সকালে পাঠাবো। ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টরা অবশ্যই দাঁড়িয়ে থেকে দেখে নেবেন ব্যালট বাক্সগুলো খালি আছে কি না। তারা ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ গণনা ও ফলাফল সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন”।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “ভোট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফুটে উঠবে মিডিয়ার মাধ্যমে। কারণ মিডিয়ার কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে এবং ভেতরে থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকদের প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে না। তারা সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন এবং ভেতরে ঢুকে ছবি তুলতে পারবেন। সত্য-মিথ্যা জনগণকে জানাতে পারবেন। আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করেছি। যেখানে দুই ঘণ্টা পর পর প্রতিটি কেন্দ্রে কত শতাংশ ভোট পড়লো ইনপুট দেয়া হবে। মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাপস ডাউনলোড করে সেটা সবাই জানতে পারবেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, ১০টার সময় দেখা গেল ১০ শতাংশ ভোট পড়ল। কিন্তু ১২টার দিকে গিয়ে হঠাৎ ৮০ শতাংশ হয়ে গেল। এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে না। এজন্য আমরা বিভিন্ন পরিমাপকের ব্যাবস্থা নিয়েছি। যাতে ভোট গ্রহণের সত্যতা মানুষের মাঝে ফুটে ওঠে”।
এই সময় সাংবাদিকরা ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান ও নাশকতা ঠেকানোর আগাম প্রস্তুতি নিয়েও নানান প্রশ্ন করেন সিইসি কে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কাজী হাবিবুল আউয়াল অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হবে জানিয়ে বলেন, “আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতিতে অনেকে কালো টাকার বিনিময়ে পেশাদার কিছু সন্ত্রাসী ব্যবহার করে। তারা যাতে ভোটকে প্রভাবিত না করতে পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তাদের বক্তব্য শুনেছি। আমরাও যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছি। তারা বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের কথা বলেছেন। পোস্টার ছেঁড়া, ক্যাম্পে আগুন দেয়ার কথা বলেছেন। সার্বিকভাবে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা জানিয়েছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের আচরণে তারা সন্তুষ্ট”।
একই প্রসঙ্গে সিইসি আরো বলেন, “কোনো পেশিশক্তির উদ্ভব ঘটলে প্রিজাইডিং অফিসারকে ভোট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসার যদি বন্ধ না করেন, রিটার্নিং অফিসার অবহিত হলে তিনি বন্ধ করে দেবেন। তিনিও যদি বন্ধ না করেন, তৎক্ষণাৎ আমরা ঢাকা থেকে অবহিত হলে সেখান থেকে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিবো”।
সর্বশেষ সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আরো যোগ করেন “কথাগুলো বললাম আপনাদের মাঝে আমাদের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে একটা অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেটি যাতে দূরীভূত হয়। আমরা নির্বাহী প্রশাসন ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। এখানে ও.সি, ইউ.এন.ও, ডি.সি ও এস.পি দের বক্তব্য শুনেছি। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালো”।