উখিয়া প্রতিনিধি: উখিয়া টেকনাফ সড়ক ও উপসড়ক জুড়েই তিন চাকার যানবাহন টমটম ও অটোরিকসা এখন রোহিঙ্গা এবং অল্প বয়সী শিশু কিশোরের হাতে। যে বয়সে স্কুলে থাকার কথা সে বয়সে ড্রাইভিং এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় শিশুরা। এতে যাত্রীরা চরম আতংক মাথায় নিয়ে প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চললেও দেখার যেন কেউই নেই। তাই প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। ইজিবাইকের মালিকরা সংশ্লিষ্ট বাজারের লাইন ম্যানকে মাসিক টোকেন নিয়ে এসব অবৈধ ইজিবাইক চালাচ্ছে ।
সরজমিন দেখা যায়, উখিয়া উপজেলার পালংখালী বাজার, বালুখালি বাজার, কুতুপালং বাজার, কোট বাজার সোনারপাড়া ও মরিচ্যা বাজারের যেখানে সেখানে তাদের ইজিবাইক থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করাচ্ছেন। চলাচলরত অসংখ্য ইজিবাইকের কারনে এসব বাজারে মধ্যে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজটের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা ইজিবাইক চালাচ্ছে তাদের মধ্যে ১২-১৩ বছরের কম বয়সের কিশোরেরাও রয়েছে। এখন প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ইজিবাইক সড়কে নামানো হচ্ছে। আর এসব ইজিবাইক দিয়ে তারা যাত্রী নিয়ে সড়কে দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রী বহন করেছে। এই সব ইজিবাইক চালকদের মধ্যে শিশু কিশোর আবার কেউ কেউ মাঠের কৃষি শ্রমিক অথবা আগে রিকশা/ভ্যান চালাতেন। আবার কেউ কেউ বয়সে কিশোর। এদের শত করা ৮০ জন চালকেই জানে না কীভাবে রাস্তায় ইজিবাইক চালাতে হয়। তারপরও তারা নিয়মিত উখিয়া টেকনাফ সড়ক ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের সড়কে ৮-১০ জন করে যাত্রী নিয়ে দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে।
হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ১৫ বছরের এক ইজিবাইক চালক জানান, সে তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি। তাই তিনি সহজে টাকা ইনকাম করার জন্য কিস্তির মাধ্যমে ইজিবাইক ক্রয় করে।
এদিকে কুতুপালং এলাকার এক ইজিবাইক চলাক জানান, গত ২ বছর ধরে ইজিবাইক চালিয়ে ৪ সদস্যের সংসারের জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে হারে প্রতিদিন নতুন নতুন ইজিবাইক রাস্তায় নামছে তাতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তার অভিযোগ নতুন ইজিবাইক চালকেরা আইন কানুন মানে না। কে কত টাকা আয় করবে তারা সেই প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত।
আইন সূত্র মতে, ‘১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যাটারি চালিত যানবাহন মোটার যান নয়; ফলে বিআরটিএ থেকে কোনো রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয় না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে’।
‘গত ১ আগস্ট ২০১৫ সাল থেকে সড়ক নিরাপত্তা বিধানে সব জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার অটোরিক্সা/অটোটেম্পু এবং সবরকম অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা আছে। এলক্ষ্যে ২৭ জুলাই ২০১৫ তারিখে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সম্প্রতি হাইকোর্ট বিভাগ একই নির্দেশনা দিয়েছে’।
শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী, ‘শিশু আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি তাঁর দায়িত্বে থাকা শিশুকে আঘাত, উৎপীড়ন বা অবহেলা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন’।
উখিয়া শাহপুরী হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ এফএএম সাইফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে এবং রোহিঙ্গা ও অল্প বয়সী শিশু কিশোরের হাতে ইজিবাইক দেখলে সাথে মামলা দিয়। প্রতিমাসে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গত আগস্ট মাসে ৩৫টির মামলা দেওয়া হয়েছে৷ পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ চাঁদাবাজি বা টোকেন বানিজ্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’৷
এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব জানান, শিশু কর্তৃক যানবাহন চালানোর বিষয়ে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি সবাই মিলেই অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে উপজেলা মাসিক সভায় আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।