সিপ্লাস ডেস্ক: ইউক্রেনের নোভা কাখোভকা বাঁধ ধসে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় মরদেহ ভাসতে দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সোভিয়েত আমলের গুরত্বপূর্ণ বাঁধটি গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে দিনিপ্রো নদীর পানি বেড়ে আশেপাশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ওই বাঁধ গুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ইউক্রেন এবং রাশিয়া একে অন্যকে দোষারোপ করছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এটা জানা সম্ভব হয়নি যে, আসলেই ওই হামলার পেছনে কারা দায়ী। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউজ সাইট পলিটিকোর সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট জেলেনিস্ক অভিযোগ করেছেন যে, বন্যা কবলিত এলাকায় লোকজনকে উদ্ধারের সময় ইউক্রেনীয় উদ্ধারকর্মীদের গুলি করেছে রুশ বাহিনী।
তিনি বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় মরদেহ ভাসছে। দখলকৃত খেরসন থেকে লোকজনকে উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের বাহিনী যখন সেখানে লোকজনকে উদ্ধারে চেষ্টা করছিল সে সময় দখলদাররা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে।
এদিকে রুশ নিয়ন্ত্রিত ওলেশকি শহরের মেয়র ইয়েভহেন রিশচুকের বরাত দিয়ে দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানিয়েছে, বাঁধ ধসে বন্যার কারণে কমপক্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে বৃহস্পতিবার নোভা কাখোভকার মেয়র জানিয়েছেন, বন্যায় পাঁচজন নিহত হয়েছে।
তবে জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেছেন, কতজন মারা গেছেন তা এখনই জানা সম্ভব নয়। দিনিপ্রো নদীর আশেপাশে ইউক্রেন এবং রাশিয়া, দুদেশেরই বেশ কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউক্রেনের আঞ্চলিক গভর্নর ওলেকসান্দর প্রোকুদিনের অনুমান, খেরসনের প্রায় ৬০০ বর্গকিলোমিটার (২৩০ বর্গমাইল) এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যা কবলিত এলাকার প্রায় ৬৮ শতাংশই রুশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে প্রায় ২ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০৩ জনই শিশু। অপরদিকে রুশ নিয়ন্ত্রিত এলাকার আঞ্চলিক গভর্নর ভ্লাদিমির সালদো বলেন, প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত এলাকায় রয়েছেন। তার ডেপুটি তাতয়ানা কুজমিখ বলেন, ১ হাজার ২৭৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে বন্যায় ইউক্রেনের বিপুল এলাকার কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে দেশটির কৃষিখাতে দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে, দক্ষিণ ইউক্রেনের মাঠগুলো আগামী বছরের শুরুর দিকেই ‘মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে’। কারণ কাখোভকা জলাধারের ওপর নির্ভরশীল সেচ ব্যবস্থাগুলো আর কাজ করছে না।
জলাধারটি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। আনুমানিক ৪ দশমিক ৪ ঘনমাইল পানি গর্জন করতে করতে দিনিপ্রো নদী বেয়ে কৃষ্ণসাগরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেনীয় কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধের আগে ওই এলাকার ৩১টি সেচব্যবস্থার মাধ্যমে ৫ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে পানি সরবরাহ করা হতো। এই পানির একমাত্র উৎস ছিল কাখোভকা জলাধার। বন্যার কারণে দেশটির কাজকোভা দিবরোভা চিড়িয়াখানায় প্রায় তিনশ প্রাণীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া শত শত মৃত মাছও পানিতে ভাসতে দেখা গেছে।