ঈদগাঁও প্রতিনিধি: আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করছে প্রার্থীরা। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা। তবে এখন পর্যন্ত শান্ত রয়েছে নির্বাচনী পরিবেশ। ঘটেনি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা।
এই আসনে মোট সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। ঋণখেলাপির কারণে আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকা প্রার্থী না থাকায় লড়াই চলছে মুলত দুই প্রার্থীর মধ্যে। অন্য পাঁচজন প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালালেও ভোটের মাঠে তাদের উপস্থিতি তেমন নেই।
কক্সবাজার-১(চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে প্রতিদ্বন্ধীতাকারী সাত প্রার্থী হলেন- কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (হাতঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম (ট্রাক), ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ী), জাতীয় পার্টি (জাপা) হোসনে আরা (নাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলমের ছেলে তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন (ঈগল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মীরাক্কেল অভিনেতাখ্যাত কমর উদ্দিন আরমান (কলারছড়ি) ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন (মোমবাতি)।
উক্ত আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি। কিন্তু তিনি ঋণ খেলাপির কারণে তার মনোনয়ন বাতিল করে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা। পরে তিনি ওই আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে, সেখানেও তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। এরপর তিনি নির্বাচন কমিশন কৃর্তক দেয়া বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন, সেখানেও তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। যার ফলে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েন সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি।
চকরিয়া-পেকুয়া আসনে আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী না থাকায় স্থানীয় আওয়ামীলীগের একটি অংশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে সমর্থন দেয়। আওয়ামীলীগের সমর্থনের পর থেকে নির্বাচনী মাঠের মোড় ঘুরে যায়। জেলা আওয়ামীলীগ কল্যাণ পার্টিকে সমর্থন দেয়ার পর থেকে স্থানীয় আওয়ামীলীগের পক্ষে মাঠে কাজ করছেন চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী,বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে হোছাইন আরিফ, বিএমচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, ঢেমুশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন চৌধুরী, পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ চৌধুরীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দরা।
যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ইবরাহিমের প্রচার-প্রচারণা। চষে বেড়াচ্ছেন চকরিয়া-পেকুয়ার বিভিন্ন এলাকা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত করছেন সভা-সমাবেশ। এসব সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন জেলা ও উপজেলা এবং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। ফলে হাতঘড়ি তথা সৈয়দ ইবরাহিমের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন তৈরী হয়েছে।
অপরদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ¦ জাফর আলম তথা ট্রাক মার্কার থেমে নেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। তিনিও প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তার কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন। তার পক্ষেও উপজেলা, পৌরসভা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরী, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী, ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর, হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন মিরাজ, চিরিংগা ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন চৌধুরী, সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান নবী হোসাইন চৌধুরী সহ স্থায়ী নেতৃবৃন্দরা।
জেলা আওয়ামীলীগ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিলেও তা মানছেন না স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা। আওয়ামীলীগের অনেক নেতা বহিস্কারের ভয়ে প্রকাশ্যে নির্বাচন করছেন না জাফর আলম তথা ট্রাক প্রতিকের পক্ষে।
সম্প্রতি এমপি জাফর আলম প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে নিয়ে অসৌজন্যমুলক ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের অভিযোগে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া জেলা আওয়ামীলীগ। পাশাপাশি এক সপ্তাহ সময় দেয়া হয় নোটিশের জবাব দিতে। এই নোটিশের সদুত্তর দিতে না পারলে আওয়ামীলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হবে বলেও জানানো হয় ওই নোটিশে।
অন্য পাঁচ প্রার্থী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নেই তারা। এই পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি তথা হাতুড়ী মার্কার প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ বশিরুল আলমের পক্ষে মাইকিং চলছে। তবে, মাঠে দেখা মিলেনি জাতীয় পার্টি (জাপা) তথা নাঙ্গল প্রতিক, ইসলামী ফ্রন্টের তথা মোমবাতি প্রতিকের প্রার্থী বেলাল উদ্দিনকে। স্বতন্ত্র তথা ঈগল প্রতিকের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলমের ছেলে তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন নির্বাচনে দাঁড়ালেও তার পক্ষে ভোট না চেয়ে বাবার পক্ষেই নির্বাচন করছেন। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী তথা কলারছড়ি প্রতিকের প্রার্থী কমর উদ্দিন আরমানকে মাঠে দেখা না গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ভিন্ন আলোকে প্রচারণা চালাবেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার-১(চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে মোট ভোটার রয়েছেন পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৪’শ ৬৪জন। তারমধ্যে চকরিয়ায় ৩ লাখ ৭৮হাজার ৯’শ৮৯ জন এবং পেকুয়ায় ১ লাখ ৪৩ হাজার।