নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় বিএনপি,যুবদল, ছাত্রদলের নেতাদের সাথে অনুষ্ঠিত মত বিনিময়ে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
জননিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বশীল ক্যাডার হয়ে গায়ে পুলিশের পোষাক জড়িয়ে এমন জনবিরোধী বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তার এমন বক্তব্যে বর্তমানে রাঙ্গুনিয়ার জননিরাপত্তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে। বক্তব্যের ভিডিওটি ভাইরাল হলে এই ওসি’কে নিয়ে সরকারের নিম্ন থেকে উচ্চ পর্যায়ে শুরু হয় নানা আলোচনা।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়ন পরিষদে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বলেছিলেন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যারা ৫ আগষ্টের আগে সাধারণ মানুষকে হত্যা, হামলা, নির্যাতন করেছে। তাদেরকে দেখলে গণধোলাই দিয়ে থানায় নিয়ে আসবেন। থানায় না হলে আদালতে হলেও মামলা এস্টাব্লিশড করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
তবে এই নিয়ে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি আহসান হাবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে চাটগাঁ নিউজকে তিনি বলেন, এটা মিসটেক হয়ে গেছে। এরজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এটা অনিচ্ছাকৃত হয়ে গেছে। আমার থানায় আসবেন, আপনার দাওয়াত রইলো।
ওসি আহসান হাবিবের বক্তব্যের ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, তিনি বিএনপির সাবেক প্রয়াত নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিদেহী আত্মার প্রতি শান্তি কামনা করেন বক্তব্য শুরু করেন।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু বিএনপির লোক আওয়ামী লীগের সাথে মিশে গেছে। অপরাধের অরিজিনাল ওয়ার্ড ভিত্তিক একটা লিস্ট আমি চাই। কোন ধরণের মাদক, চাঁদাবাজি চলবে না এলাকায়। দল যাকে নির্বাচনের জন্য প্রতীক বরাদ্দ দেবে তার সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনারা সবাই কাজ করবেন। যোগ্য প্রার্থীকে আপনারা ভোট দিবেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ওসি বলেন, ৫ আগষ্টের মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান। আমার এক ভাই বলেছে, মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি একটা সঠিক পরামর্শ দিব। প্রয়োজনবোধে কোর্টে আলাপ করবো মামলাটি কিভাবে এস্টাবলিশড করা যায়।
ত্যাগী, নিবেদিত নেতাদের মূল্যায়নে তালিকা প্রস্তুতির নির্দেশনা দিয়ে ওসি আহসান হাবিব বলেন, আমাদের কিছু বিএনপির লোক আওয়ামী লীগের সাথে মিশে গেছে। অরজিনাল ওয়ার্ডভিত্তিক একটা লিস্ট আমি চাই। অপরাধ ঘটলে সবকিছু থানার ওসির পক্ষে সম্ভব না। কিছু দায়িত্ব আপনাদেরও নিতে হবে। যে লোকটা সৎ এবং যোগ্য তাকে দিলে সুনাম হবে, বিএনপির সুনাম হবে। সেটা করতে হবে। চাঁদাবাজি করা যাবে না।
আওয়ামী নেতাকর্মীদের গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দের আহ্বান জানিয়ে ওসি বলেন, ‘বিশেষ করে একটি কথা বলতে চাই, যারা ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে, মারপিট করছে তাদের দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার মধ্যে গণধোলাই দিয়া থানায় নিয়া আসবেন। বিশেষ করে ছাত্রলীগ ঠাঁই পাবে না। আপনাদের এই পর্যায়ে যদি আওয়ামী লীগ থাকতো আপনাদের ঠ্যাং-ঠোং (হাত-পা) ল্যাংরা হয়ে যেতো।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) হুমায়ুন কবির বলেন, বক্তব্যটি আমি শুনিনি, তাই আমার নলেজে নেই। সম্ভব হলে আমাকে উনার বক্তব্যের ভিডিওটি আমার হোয়াটস অ্যাপে পাঠান। আমি ওসির সাথে কথা বলব। দায়িত্বে থেকে তিনি অপ্রাসঙ্গিক কোনো বক্তব্য তিনি দিতে পারে না। অফিসিয়ালি উনাকে সতর্ক করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি