আনোয়ারা প্রতিনিধি : টিআর কাবিখা, কাবিটাসহ সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দে অনিয়ম-দুর্নীতি, হোল্ডিং ট্যাক্স ও সালিশ বাণিজ্যের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আনোয়ারার বারশত ইউপি চেয়ারম্যান এমএ কাইয়ুম শাহ’র বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তারা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে চেয়ারম্যান পরিষদে কোনো সভা করেননি। চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. তৌহিদ ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের ঘরে ঘরে হোল্ডিং নাম্বার প্রদান করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ওই টাকা দিয়ে ইউনিয়নের কোনো উন্নয়ন কাজের কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে সরকার এলজিএসপি-৩, ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা, টিআর কাবিখা, কাবিটা, অতি দরিদ্র কর্মসংস্থান কর্মসূচি, এডিপি বরাদ্দসহ বিভিন্ন সময় নানান বরাদ্দ প্রদান করেছে। কিন্তু চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যদের কোন কিছু না জানিয়ে কোন প্রকার সভা না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেন।
অভিযোগে সালিশ বাণিজ্যের মাধ্যমে জনসাধারণের টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়ে চেয়ারম্যানের বিরূদ্ধে অভিযোগ করেন ইউপি সদস্যরা। এছাড়া চেয়ারম্যান কর্তৃক ভুয়া ওয়ারিশন সনদ প্রদানের অভিযোগও উঠে।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান এমএ কাইয়ুম শাহ আওয়ামী লীগের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ’র অনুসারী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর সাবেক মন্ত্রী ও তার পিএস রিদওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েমের প্রভাব খাটিয়ে ইউনিয়নে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। বিভিন্ন সালিশে অর্থ নিয়ে পক্ষপাতিত্ব করেন। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। পছন্দের মানুষ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন ভাতা গরিব অসহায়রা পাইনি বলেও জানা যায়।
বারশত ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর মুহাম্মদ বলেন, জনগণের ভোটে আমরা নয়জন পুরুষ ও তিনজন মহিলা ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু পরিষদ গঠনের পর থেকে চেয়ারম্যান আমাদেরকে বিভিন্নভাবে বঞ্চিত করেছেন। এরমধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান তৌহিদও চেয়ারম্যানের সাথে যোগসাজশে সব লুটেপুটে খেয়েছে। সরকারের বিভিন্ন বরাদ্দ ইউপি সদস্যদের নিয়ে সভা না করে নিজের ইচ্ছে মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডের ঘরে ঘরে হোল্ডিং নম্বর প্রদানের নামে আদায়কৃত কোটি টাকার কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেননি। এই বিশাল অঙ্কের অর্থগুলোর কোনো হিসেব নেই। তারা দু’জন মিলে এসব অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন ভাতাসহ সুযোগ সুবিধা তাদের পছন্দের লোকজনকে দিয়েছেন। কিন্তু প্রকৃত লোকদের দিতে না পারায় জনগণের কাছে আমরা মুখ দেখাতে পারছি না৷
সংরক্ষিত নারী সদস্য বিলকিস আক্তার চৌধুরী জানান, চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করে দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছে। পরিষদে আমাদের সাথে সবসময় খারাপ আচরণ করেছে। আমাদের অধিকার থেকেও বঞ্চিত করেছে। এতে আমরা ৯ ইউপি সদস্যের সিদ্ধান্তে চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন জানান, বারশত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্তসাপেক্ষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে (৯ সেপ্টেম্বর) আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কলিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন ইউপি সদস্যরা।
চাটগাঁ নিউজ/সাজ্জাদ/এসএ