আনোয়ারায় শিল্পাঞ্চলে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে মরিয়া বিএনপির নেতাকর্মী!

যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বহিষ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেডের একটি কারখানার খাবারের টেন্ডার পেতে কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ ওঠার পর বিএনপি নেতা ইলিয়াছ কাঞ্চনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের দখল, নৈরাজ্য, লুটপাট থেকে বিরত থাকতে কেন্দ্র থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করে যারা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে কোরিয়ান কেইপিজেডে অবস্থিত আমেরিকান এন্ড ইফার্ড বাংলাদেশ লি. নামের একটি কারখানার খাবারের টেন্ডার পেতে ওই কারখানার ডিজিএমকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিরুদ্ধে। গত ২১ অক্টোবর কর্ণফুলী থানায় অভিযোগটি করেন ওই কারখানার ডিজিএম (মানব সম্পদ বিভাগ) শেগুফতা গনি। অভিযোগে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও মো. কাইয়ুম খান নামের ২ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা ২ মাস পূর্বে ওই কোম্পানিতে খাবারের টেন্ডার পাওয়ার জন্য ডিজিএমকে প্রস্তাব দেন। তখন তাদেরকে কোম্পানি পলিসি অনুযায়ী বিবেচনা করে হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু অভিযুক্তরা মোবাইলে প্রতি সপ্তাহে ফোন করে খবর জানতে চাইতো। গত ২০ অক্টোবর তারা বাদীর মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে জানান যে ১ নভেম্বর হইতে খাবারের টেন্ডারের কাজ না দিলে নানারকমের ক্ষতি করা হবে। গত সোমবার বিকাল ৪ টার দিকে বিবাদীদ্বয় সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন একটি মাইক্রোবাসে করে বিনা অনুমতিতে ফ্যাক্টরির ভেতরে প্রবেশ করে ডিজিএমকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন এবং যাওয়ার সময় ফ্যাক্টরিতে কাজে না যাওয়ার জন্য বাদীকে হুমকি দিয়ে যায়। এসময় তাদেরকে টেন্ডার না দিলে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেয়।

ঘটনার পরে একটি সিসি ফুটেজে দেখা যায়, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও চিহ্নিত যুবলীগ নেতা কাইয়ুম খানসহ কয়েকজন নেতাকর্মী এক কেইপিজেড কর্মকর্তার সাথে হট্টগোল করেন৷ একপর্যায়ে ওই কর্মকর্তাকে হুমকি দেন তারা। এসময় তাদের সাথে দেখা যায় দক্ষিণ জেলা যুবদলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আবদুল করিম, আনোয়ারা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্বাস নুর সহ আরও কয়েকজনকে। ঘটনাটি মুহূর্তে ভাইরাল হলে আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়।

অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আনোয়ারায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বিএনপির সুবিধাবাদী নেতাকর্মীরা। সরকার পতনের পরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেলে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য দখলে নিতে মরিয়া উপজেলা বিএনপির নেতারা। কেন্দ্র থেকে দখল, নৈরাজ্য, লুটপাট থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশনা দিলেও তা কাজে আসছে না আনোয়ারায়।

আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে কাফকো, সিইউএফএল সার কারখানা ও কেইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চলে ব্যবসা ও টেন্ডার বাণিজ্য দখল এবং বিভিন্ন হাটবাজার, অবৈধ বালু মহাল দখল নিয়ে একাধিক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় দুটি জিডি ও একটি অপহরণ মামলা হয়েছে। ফলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। দল থেকে অনেককে বহিষ্কারও করা হয়েছে।

এদিকে, ২৫ আগষ্ট আনোয়ারায় অবস্থিত সিইউএফএল, ডিএপি ও কাফকো সার কারখানার সার ক্যারিং কাজের দখল নিতে সার কারখানার এরিয়ায় দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মো. শাহজাহান ও বারশত ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাসানসহ কয়েকজন বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা হট্টগোল সৃষ্টি করে। এর পরের দিন আগের ঠিকাদারকে সার ক্যারিংয়ে বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠে।

এর আগে, ২১ আগষ্ট কেইপিজেড কারখানায় খাবার সরবরাহের প্রস্তাব দিলে তা না মানায় আবদুল করিম নামের কেইপিজেডের এক সরবরাহকারীকে হুমকির অভিযোগ উঠে উপজেলা বিএনপি নেতা আবদুল গফুরের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই বিএনপির নেতার বিরুদ্ধে কর্ণফুলী থানায় একটি অভিযোগ করেন। এর আগে গত ২০২২ সালের নভেম্বরে কর্ণফুলী টানেলের কেবল চুরির অপরাধে বিএনপি নেতা আবদুল গফুরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এসব ঘটনায় বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে জানান দলের একাধিক প্রবীণ নেতা। তারা বলেন, দলের দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলেন না তারা এখন দখল, টেন্ডারবাজি ও নৈরাজ্য করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে দলের অনেক ক্ষতি হবে।

এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশ নায়ক তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশ যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা অনিয়ম চাঁদাবাজি জবরদখল এর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ঠ তথ্যভিত্তিক অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভিন্ন অপরাধে এ পর্যন্ত দলের প্রায় দেড় হাজারের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আনোয়ারায়ও অনেক নেতার বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top