নিজস্ব প্রতিবেদক : সহসা হচ্ছে না চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। যদিও কেন্দ্রের নির্দেশ রয়েছে দ্রুত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন সম্পন্ন করে আগামী সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবরে মহানগর সম্মেলন করার। তবে প্রশ্ন ওঠেছে, যেখানে মহানগর কমিটি গঠনের ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি, সেখানে মাত্র কয়েক মাসে সবগুলো সম্মেলন শেষ করা আদৌ সম্ভব নয়। আর মাঠ পর্যায়ে সম্মেলন শেষ না হলে মহানগর সম্মেলন করার প্রশ্নই ওঠে না। শুধু তাই নয়, চলমান জটিলতায় আগামী একশ বছরেরও মহানগর সম্মেলন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন দলের অনেকে।
রোববার (১২ মে) বিকেলে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এর পর আগামী সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবরে মহানগর সম্মেলন করা হবে। এ বিষয়ে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাগাদা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে ১৯ মে মহানগরের কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানানো হয় ওই বৈঠকে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাটগাঁ নিউজকে বলেন, ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির মধ্যে ৭ জন পরলোকগমন করেছেন, বেঁচে আছেন ৬৪ জন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও মহানগরের ১৩২ ইউনিটের মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ১০৫টির, ৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ও ১৫টি থানার মধ্যে শুধুমাত্র ইপিজেড থানার সম্মেলন সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রায় ৬০-৭০ ভাগ সম্মেলন গত ১১ বছরে করা সম্ভব হয়নি। সেখানে কেন্দ্রে নির্দেশ মতে মাত্র কয়েক মাসে সবগুলো ওয়ার্ড, ইউনিট ও থানার সম্মেলন শেষ করে সেপ্টেম্বরে-অক্টোবরে মহানগর সম্মেলনের চিন্তা আষাঢ়ের গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার মনে হয়, সব নিয়ম মেনে মহানগর সম্মেলন করা আগামী একশ বছরেরও সম্ভব হবে না।
সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বৈঠক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগেরসহ সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আজকে (রবিবার) আমরা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক করেছি। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ১৩২ ইউনিটের মধ্যে ১০৫টির সম্মেলন সম্পন্ন, ৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টির সম্মেলন সম্পন্ন ও ১৫টি থানার মধ্যে শুধু ইপিজেড থানার সম্মেলন সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী ১৯ মে মহানগরের কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনগুলো শেষ করে আগামী সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবরে মহানগর সম্মেলন দেওয়া হবে বলে দায়িত্বশীল এই নেতা জানান।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। এতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কাজী ইনামুল হক দানু।
দানু মারা যাবার পর ২০১৩ সালে ১৩ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় মহিউদ্দিনকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর প্রথম সহসভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী পান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব। গত বছর তাকে ভারমুক্ত করা হয়েছে।
২০২১ সালের শেষ দিকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলন শুরু হয়। কিন্তু এ সম্মেলন নিয়ে নেতারা দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এর ফলে চট্টগ্রাম নগরীতে আওয়ামী লীগের ১৩২টি ইউনিট, ৪৪ ওয়ার্ড ও ১৫টি সাংগঠনিক থানার মধ্যে শুধু কিছু ইউনিট ও ওয়ার্ড ছাড়া আর কোথাও সম্মেলন সম্ভব হয়নি। তবে ওয়ার্ড-ইউনিটের সম্মেলনগুলো নিয়েও বিতর্ক আছে।
এ অবস্থায় দফায় দফায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও সেটা হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালে ১ অক্টোবর, ৪ ডিসেম্বর ও ১৮ ডিসেম্বর এবং সর্বশেষ গত বছরের ৩১ জুলাই চার দফায় নগর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও সেই সম্মেলন আলোর মুখ দেখেনি।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ