চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : আজ বুধবারের (৩১ জুলাই) জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ। এদিন দেশের সব আদালত প্রাঙ্গনে “মার্চ ফর জাস্টিস” কর্মসূচি পালন করা হবে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের।
বার্তায় বলা হয়েছে, সারাদেশে ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, গুম এবং খুনের প্রতিবাদে ও জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে এবং ছাত্র সমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের সকল আদালত প্রাঙ্গনে আগামীকাল বুধবার মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করা হবে।
চট্টগ্রামে আজ অভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে।
মঙ্গলবাার রাতে এক বিবৃতিতে বলা হয়- সারাদেশে ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যা, গণপ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, গুম এবং খুনের প্রতিবাদে ও জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে এবং ছাত্র সমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের সকল আদালত, ক্যাম্পাস এবং রাজপথে ৩১ জুলাই বুধবার ‘March for Justice’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
সকাল ১১ টা চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গন (দোয়েল চত্বর) এ কর্মসূচিতে আমরা সারাদেশের শিক্ষক, আইনজীবী, শিল্পী, মানবাধিকার কর্মী, পেশাজীবি, শ্রমজীবী ও সকল নাগরিককে আমাদের কর্মসূচি পালনে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও আমাদের দাবী আদায়ের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নির্বিচারে হত্যা, তাদের উপর সন্ত্রাসী আক্রমণ ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে বুধবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক ঐক্য।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এক পর্যায়ে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু হতাহত হন। সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা ১৫০ আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, দেশজুড়ে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২৬৬ জন।
সহিংসতার এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা।
সহিংসতার কারণে গত ১৭ জুলাই থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সব স্কুল–কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই দিন থেকে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সরকারের দাবি, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিএনপি ও জামায়াত–শিবিরের নেতাকর্মীরা ছদ্মবেশে প্রবেশ করে সহিংসতা উসকে দেয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি, বনানীর সেতুভবন, মহাখালির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, মেট্রোরেল স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত ১৯ জুলাই রাত থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। মাঠে নামানো হয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের। সহিংসতার ঘটনায় শুধু রাজধানীতে ২২৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর এতে রোববার পর্যন্ত ২ হাজার ৭৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যায় মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয় থেকে সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক। লিখিত ও ভিডিও বার্তায় তারা সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিও জানান। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রাণহানি ও সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানান ৬ সমন্বয়ক।
লিখিত বার্তাটিত সই করেন মো. নাহিদ ইসলাম, মো. সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মো. আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ ও নুসরাত তাবাসসুম।
এতে বলা হয়, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে আহত এবং নিহত হয়েছেন। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ সহ নানা সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার যা ইতিমধ্যে সরকার পূরণ করেছেন। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। সার্বিক স্বার্থে আমরা এই মুহূর্ত থেকে আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।’
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘ডিবি কার্যালয়ে সমন্বয়কদের জিম্মি করে, ব্ল্যাকমেইল করে এই লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিবৃতি আদায় ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।’
এর আগে গত কয়েকদিনে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই ৬ জনকে ডিবি হেফাজতে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, নিরাপত্তা বিবেচনায় তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস