আগুনের মাঝেই চলছে বসবাস

৪৩ দিনে চট্টগ্রামে ২৩ অগ্নিকাণ্ড

উজ্জ্বল দত্ত :  এখন শুষ্ক মৌসুম। শুষ্ক মৌসুম মানে আগুনের মৌসুম। প্রায় প্রত্যেক দিনই চট্টগ্রামের কোথাও না কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে ভুক্তভোগী জনসাধারণ অর্থনৈতিক ও আর্থ সামাজিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে। কিন্তু আগুনের ভয়াবহতা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্টরা উদাসীন।

অভিযোগ রয়েছে, ভৌগলিক, অবকাঠামোগত, মৌলিক সুযোগ সুবিধা, ইলেকট্রিক অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবস্থা বা যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ না করেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) বা সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলো গ্রাহকদেরকে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছে। আবার যে শর্ত পূরণের অঙ্গীকার করে জনসাধারণ সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নিচ্ছে, নির্মাণের সময় তা মানছে না তারা। এক্ষেত্রে নির্মিত ভবন বা স্থাপনাগুলোতে অগ্নিঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগ্নিঝুঁকি প্রতিরোধে অনুমোদনকারী সংস্থাগুলোকে আন্তরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেই ভবন বা স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দিতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভবন মালিকদেরকেও শর্ত পূরণ করে ভবন নির্মাণ করতে হবে। এক উদ্দেশ্যে ভবন বানিয়ে তা অন্য খাতে ব্যবহার করার মানসিকতা বন্ধ করতে হবে।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাস থেকে আজ ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত এই ৪৩ দিনে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরে ২৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হিসাবে দেখা যায়, প্রতি দুইদিন অন্তর চট্টগ্রামে একটি করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে ঘটেছে ৯টি অগ্নিকাণ্ড। অন্যদিকে, এই সময়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘটেছে ১৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স’র উপপরিচালক দিনমনি শর্মা চাটগাঁ নিউজকে বলেন, অগ্নিঝুঁকি প্রতিরোধে জনসাধারণ এবং সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থা সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে আন্তরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, অনুমোদনকারী সংস্থাগুলো ভৌগলিক, অবকাঠামোগত, মৌলিক সুযোগ সুবিধা, ইলেকট্রিক অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবস্থা বা যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ না করেই ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদনকারীদের কাছে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের অঙ্গীকার করেও মালিক পক্ষ নানাভাবে শর্ত ভাঙছে। অগ্নি দুর্গত বিভিন্ন স্থাপনায় গেলে দেখা যায়, অধিকাংশ ভবনে ইলেকট্রনিক্স অ্যাপ্লায়েন্স পর্যাপ্ত নেই। অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা।

আরো তদন্ত করলে দেখা যায়, সিডিএ’র কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েও ভবনটিতে নিরাপত্তামূলক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হয়নি। মালিকপক্ষ আবাসিকের অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহার করছে। আবার সিটি কর্পোরেশনের সাথে পারস্পরিক যোগসাজশ করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রেড লাইসেন্সও বানিয়ে নিয়েছে। এর জন্য ভবন মালিকরা যেমন দায়ী তেমনি সেবা সংস্থাগুলোও সমান দায়ী। আমাদের প্রত্যেককে সচেতনতা অবলম্বন করতেই হবে। আমরা আগুন নিয়ে খেলছি। আগুনের ভয়াবহতা জেনেও আমাদেরকে আগুনের সাথে বসবাস করতে হচ্ছে।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ 

Scroll to Top