চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যার জন্য আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ নতুন করে আরও ২৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। একইসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মতো আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার করে ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন যমুনায় সংলাপ শেষে শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সংলাপে লিখিত ও মৌখিক প্রস্তাব তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, দুই দফা সংলাপের প্রথমবারে ১০৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। দ্বিতীয় দফায় এবার আরও ২৩টি প্রস্তাব দিয়েছি। এসব প্রস্তাব কাউকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নয়, কাউকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য নয়, দেশের জনগণের জন্য দিয়েছি। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সুন্দর প্রশাসন চালানোর জন্য, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য, নিত্যপণ্যের বাজার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব রয়েছে।
জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ১৮ কোটি মানুষ যুদ্ধ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা পুলিশসহ প্রশাসনকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে, জনগণের সঙ্গে মুখোমুখি করে দিয়েছে, দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে, দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে, আমাদের হাজার হাজার ছেলে-মেয়েকে হতাহত করেছে।
অলি আহমদ বলেন, আমরা মনে করি একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তখন আমরা তাদের নিষিদ্ধ করেছিলাম। তাহলে আজ কী কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না? আমরা আবার বলেছি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তারা ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা সব কিছু করেছে। শেষ পর্যন্ত জনতার চাপে টিকে থাকতে পারেনি, ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়েছে, চোর কী করে ভালো থাকে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে জামায়াত নেতাদের তো ফাঁসি হয়েছে। এখন ওদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) ফাঁসি দিতে হবে। জামায়াতকে তো ফাঁসি দিয়েছেন, এখন আওয়ামী লীগকে ফাঁসি দেন। এটা আপনাদের দায়িত্ব।
এ ছাড়া দুর্নীতিবাজদের ধরা, জনগণের লুণ্ঠন করা টাকা ফেরত আনা, অভ্যুত্থানের সময় হত্যায় অংশ নেওয়াদের বিচারের আওতায় আনা এবং সংস্কার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন এলডিপি প্রধান অলি আহমদ।
এদিন ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপে বসছেন। এ দফায় গণফোরাম, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় পার্টি-বিজেপি (পার্থ), ১২ দলীয় জোট, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টিসহ আরও কয়েকটি দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ৫ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, হেফাজতে ইসলাম, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সরকার এরইমধ্যে তিন দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে।
তবে আগের তিন দফা এবং আগামীতেও ‘ফ্যাসিবাদী শাসন’ ও ‘গণহত্যায়’ অভিযুক্ত আওয়ামী লীগকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং হবে না বলে আগেই জানিয়েছে সরকার। আর আওয়ামী লীগের সময়ের ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে প্রথম দফায় সংলাপে ডাকা হলেও পরে বাদ দেওয়া হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ