‘আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পণ্ড’— দিনভর নাটক শেষে কমিশনের পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী-বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের দ্বন্দ্বের মুখে পদত্যাগ করেছে নির্বাচন কমিশন। যে কারণে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা আর হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সাধারণ সভায় অ্যাডহক কমিটি গঠনের পথে হাঁটছে সমিতি।

অন্তর্বর্তী এ কমিটি আগামী দুই মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে। তবে ওই নির্বাচনও দলীয় গ্যাঁড়াকলে পড়ে ভন্ডুল হয়ে যাবে? নাকি সুষ্ঠু সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে- সেটাই এখন দেখার বিষয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে চট্টগ্রাম আদালত পাড়ায় প্রথম দিকে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্রচার প্রচারণায় সরব ছিল। তবে এর কিছুদিন পর হঠাৎ করে সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীরা প্রচার বিমুখ হয়ে পড়ে। আদালত পাড়ার বিভিন্ন পয়েন্টে টাঙ্গানো পোস্টার ব্যানার ছাড়া কাউন্সেলিং বা স্বশরীরী প্রচারণায় তারা অনেকটা ম্রিয়মাণ হয়ে যায়। তবে ঐক্য পরিষদের প্রার্থীদেরকে এক্ষেত্রে ভিন্ন অবস্থানে দেখা গেছে। লিফলেট বিতরণ, সৌজন্য সাক্ষাত, অবস্থান প্রচারণাসহ নানামুখী নির্বাচনী প্রচারণায় তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীদের এমন প্রচারণা বিমুখী আচরণ নিয়ে আদালত পাড়ায় বিভিন্ন কথাও শোনা গেছে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানের স্বার্থে আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করে। আজ ৪ ফেব্রুয়ারি কমিশনের কাছে তারা প্রস্তাবটি জমা দেয়। অপরদিকে একইদিন আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নির্বাচন থেকে সমন্বয় পরিষদের মনোনয়ন বাতিল চেয়ে কমিশনের কাছে আরেকটি প্রস্তাব করে বসে। নির্বাচন ঘিরে দুই পক্ষের এমন মুখোমুখি অবস্থান ও পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সমাধানে দিনব্যাপী নানা আলোচনা চলে। কিন্তু সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। এমন অবস্থায় শেষে নির্বাচন কমিশনই পদত্যাগ করে বসে। মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সোলায়মান, নির্বাচন কর্মকর্তা তারিক আহমেদ, উত্তম কুমার দত্ত, নুরুদ্দিন আরিফ চৌধুরী ও সামশ্রী বড়ুয়া কমিশনের পাঁচ কর্মকর্তাই বর্তমান কমিটির কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করায় এ মুহূর্তে জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

কমিশনার বলছেন, দুটি আবেদনই সংগঠনের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত। তাছাড়া কমিশন চায় না কোন আইনজীবী সেনাবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে হেনস্তার শিকার হোক। আইনজীবী সমিতি বা সমিতির কোন সদস্যের ঐতিহ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। উভয়পক্ষের পারস্পরিক অবস্থান নির্বাচনের প্রতিকূলে হওয়ায় কমিশন ইতোমধ্যে ভয়ভীতি ও হেনস্তার শিকার হয়েছে। এমন অবস্থায় সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। তাই কমিশন পদত্যাগ করেছে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী চাটগাঁ নিউজকে বলেন, কমিশন যেহেতু পদত্যাগ করেছে সেক্ষেত্রে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখের নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ নেই। তবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সংগঠনের জন্য একটি এডহক কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাসের মধ্যে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।

তবে এডহক কমিটির তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিতব্য ওই নির্বাচনেও কি আইনজীবীরা পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাবেন, নাকি আইনজীবীদের চিরায়ত ভ্রাতৃত্ব বজায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের সারথী হবেন?- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, নির্বাচনের বিকল্প নেই। নির্বাচন ছাড়া নতুন কমিটি কিভাবে গঠিত হবে। সংগঠনের স্বার্থে আইনজীবীদেরকে নির্বাচন সম্পন্ন করা উচিত।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top