প্রেস বিজ্ঞপ্তি: অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও দৈনিক আজাদী’র পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক বলেছেন- আমরা সব সময় একটা কথা শুনে থাকি, ডাক্তাররা রোগীদের কথা শুনেন না। সে জায়াগা থেকে আমরা বেরিয়ে এসে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতাল রোগীদের আত্মবিশ্বাসটা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ইমপেরিয়াল হাসপাতালের সাথে অ্যাপোলো যুক্ত হওয়ার পর থেকে আমরা সুন্দর একটা গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এখন ৭৫+ ডাক্তারের সমন্বয়ে শক্তিশালী একটি টিম হয়েছে, আগে সেটি ছিল ২৫ জনের। রোগীদের আস্থাও এখন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বলা যায়, আগের তুলনায় তিনগুণ বেশি আস্থা বেড়েছে। চট্টগ্রামের মানুষকে বিশ্বমানের সুন্দর একটা স্বাস্থ্যসেবা উপহার দেওয়াটাই আমাদের চাওয়া। চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা তথা সারা বাংলাদেশ থেকেও যদি কেউ আসে তাদেরকে যেন আমরা ভালো একটি স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারি এই প্রত্যাশা।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে নগরীর জাকির হোসেন রোডে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি সেন্টারের যাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘ওপেন হার্ট সার্জারি সেবা এখন নির্দিষ্ট মূল্যে আপনার হাতের নাগালেই’ এই শ্লোগানকে নিয়ে কার্ডিয়াক সার্জারি সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমাদের একটাই উদ্দেশ্য চট্টগ্রামের মানুষ যেন বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা পান। আমরা কখনো মন থেকেই চাই না, কেউ অসুস্থ হোক। তবে শরীর এমন একটা জিনিস যা আমি চাই বা না চাই আমার বাবা অসুস্থ হবেন, আমার সন্তান অসুস্থ হবেন। আপনার-আমার পরিবারের লোকজনও অসুস্থ হবেন এবং পৃথিবী থেকে এক সময় চলেও যাবেন। কিন্তু আমরা চাই একটি সুন্দর পরিবেশে সবাই যেন ভালো চিকিৎসা পান। ভুল চিকিৎসার সম্মুখীন যাতে কেউ না হয়। সেটাতে যেন ডাক্তারদের গাফিলতি না থাকে সেটিও আমরা কঠোরভাবে মেনে চলার চেষ্টা করছি।
অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. মো: শাখাওয়াত হোসেন শাকিল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন- যে কোনো অপারেশনের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে। দেখা যায়, কারো হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতা থাকলে তখন অন্য অপারেশন করা হয় না। তখন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে হয়। মনে করুন, হৃদরোগের চিকিৎসক এনজিওগ্রাম করলেন, দেখলেন হার্টে একাধিক ব্লক আছে। তখন তিনি পরামর্শ দেন তাড়াতাড়ি বাইপাস সার্জারি করার জন্য। এখন কি আমরা বলতে পারবো, ওনার হার্টের অবস্থা ভালো না! তাই আমরা হার্টের সার্জারি করবো না। এটা বলার উদ্দেশ্য হলো, কার্ডিয়াক সার্জারি সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ একটি সার্জারি। আল্লাহ আমাদের দক্ষতা দিয়েছেন, তাই আমরা অনায়াসে সে কাজটি করছি। সার্জারি থেকে শুরু করে সার্জারি পরবর্তীতে কেয়ারসহ অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে রোগী স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেন। যারা হার্টের সার্জারির জন্য আসেন তাদের বেশিরভাগ অন্যান্য শারীরিক জটিলতা নিয়েও আসেন। তবে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে মৃত্যুর হার ২-৩ শতাংশ, এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এটাতে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে থাকে কার্ডিয়াক সার্জনরা। কারণ রোগী তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলে স্বাভাবিকভাবেই অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করেন। অন্যদিকে নিউরো সার্জারির অপারেশনে রোগী যান অচেতন অবস্থায়। ওই যে বললাম, ২-৩ শতাংশ মৃত্যু ঝুঁকি থাকে, এখন যদি কোনো রোগী এর মধ্যে পড়েন, তখন রোগীর স্বজনরা বলেন, হায়! হায়! রোগীটা কত ভালো অবস্থায় ছিল। তবে শেষ কথা হচ্ছে, হৃদরোগীদের ভালো থাকার জন্য অবশ্যই লাইফস্টাইল পাল্টাতে হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের হাসপাতালে ম্যানেজ করা প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডা. মো: শাখাওয়াত হোসেন শাকিল বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশন পরবর্তী রোগীদের ব্লিডিং হয়, তবে আমরা পুনরায় চেক করি। আমাদের এনজিওগ্রামের সুযোগ থাকে। বাইপাস করানোর পর আমাদের আবার রিং লাগানোরও সুযোগ থাকে। তবে আমাদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। রোগীর হঠাৎ জটিলতা হলে সেটি ম্যানেজ করার মতো আমাদের সক্ষমতা রয়েছে।
হাসপাতালের কার্ডিয়াক অ্যানেসথেসিয়ালজিস্ট ডা. সুমন শিকদার বলেন, এতদিন আমরা কার্ডিয়াক সার্জারির জন্য ঢাকা যেতাম। তবে এখন থেকে আর কাউকে ঢাকায় যেতে হবে না। আপনারা যদি সহযোগিতা করেন এই কার্ডিয়াক সেন্টার শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কার্ডিয়াক সেন্টার হিসেবে আমরা তৈরি করতে পারবো। এটি আমাদের বিশ্বাস।
অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. এ. এন. রাও বলেন, অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের সুন্দর অবকাঠামো দেখে আপনারা বুঝতেই পারছেন, এটির মান কেমন হতে পারে। হাসপাতালে সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। আমাদের হাসপাতালের ডাক্তাররা সব সময় রোগীদের সেবায় নিবেদিত। সার্জারি এবং তার পরবর্তী সময়ে ইনফেকশন কন্ট্রোল করার জন্য এই হাসপাতাল খুবই ভালো অবস্থায় রয়েছে। যার কারণে এখানে ইনফেশনের ঝুঁকি কম থাকে। যেসব রোগী কার্ডিয়াক সার্জারির জন্য ঢাকা / বিদেশের উপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য আমরা এখানে কার্ডিয়াক সার্জারির কার্যক্রম চালু করেছি। এছাড়াও কোনো রোগীকে প্রয়োজনে যদি ভারতের চেন্নাই অ্যাপোলো হাসপাতালে যেতে হয়, তবে আমরা অফিসিয়ালি এখান থেকে পাঠাতে পারবো, যাতে রোগীর কোনো অসুবিধা না হয়। আপনারা আমাদের ওপর ভরসা রাখতে পারেন। আমরা অঙ্গীকার করছি, আপনারা আপনাদের সেরা সেবাটায় দেবো।
হাসপাতালের কার্ডিয়াক সেন্টারে প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারি করা রোগী মোহাম্মদ আলী সুরুজ অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমার বাড়ি ফেনীর দাগনভ‚ঁইয়ায়। আমার হার্টের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে আমি অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হই। গত ৭ই জুলাই আমার বাইপাস সার্জারি হয়। গত ২০ দিনে আমার স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন আমি অনেক ভালো আছি। রোগীর ছেলে বলেন, অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের কার্ডিয়াক সেন্টারে আমার বাবার প্রথম অপারেশন হবে, এটি জেনে প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিলাম। পরে এখানে আসার পর ভয় চলে গেল। আমি ঢাকায় খবর নিয়ে দেখলাম, কার্ডিয়াক সার্জারিতে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ লাগবে। তবে এখানে প্রায় ৫০ হাজার টাকারও বেশি সাশ্রয় হয়েছে আমাদের। এখানে যে নির্দিষ্ট মূল্য আমাদেরকে বলা হয়েছিলো তার অধিক এক টাকাও দিতে হয়নি। এখানে এসে আমরা আরো জানতে পারি, এখানের অন্যান্য সার্জারিগুলো নির্দিষ্ট মূল্যে হয়ে থাকে এবং এর বাইরে অতিরিক্ত বাড়তি খরচ নেই।
অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মানস মজুমদারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের কার্ডিয়াক কনসালটেন্ট ডা. সাইফুর রহমান সোহেল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. মাসুদ আহমেদ, চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. প্রকাশ কেএন, চীফ নার্সিং অফিসার শান্তা রানী সাহু প্রমুখ।