আলমগীর মানিক (রাঙামাটি): পাহাড়ে দিনে দিনে চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। গত বছর নেয়া চাঁদার আটগুণ বেশি দাবি করে এবার ব্যবসায়ীদের সময় বেঁধে দিয়েছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। তাদের নির্ধারণ করা চাঁদা সময়মতো পরিশোধ না করলে বাজার বন্ধের হুমকি দিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে।
রাঙামাটির দূর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এসকল তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। ইতোমধ্যেই সন্ত্রাসীদের হুমকির কারনে তেল সংগ্রহ করতে না পারায় সোমবার বিকেল থেকে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাঘাইছড়ির ইউএনও, ওসি ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ প্রতিবেদককে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা সদরের একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন আগে থেকেই পার্বত্য চুক্তি বিরোধী উপজাতীয়দের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর নামে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরের মার্কেট থেকে ৫০ লাখ টাকা এবং চৌমুহনীর ৭টি তেলের দোকান থেকে ৭ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে এই চাঁদা পরিশোধে সময় বেধে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, ইউপিডিএফ নেতা অক্ষয় ও আধিক্কা চাকমার নেতৃত্বে চারজনের একটি দল সম্প্রতি বাঘাইছড়ির ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে। এই বৈঠকে ইউপিডিএফ এর পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়, বাঘাইছড়ি উপজেলা মার্কেট ও চৌমুহনী মার্কেট এর মোট ২৯৭টি দোকানের লিষ্ট ইউপিডিএফ (প্রসীত) এর কাছে আছে। যে দোকান গুলোকে (এ,বি,সি,ডি) ৪টি ক্যাটাগরীতে বিভক্ত করা হয়েছে।
যেখানে (এ) ক্যাটাগরি তেলের দোকান,হার্ডওয়্যারের দোকান, বড় হোটেল, মুদির দোকান, কাঁচামালের পাইকারি দোকানগুলোকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে টোকেন কাটতে বলা হয়। যা গত বছর ছিল ৮-১০ হাজার টাকা। (বি) ক্যাটাগরি ছোট মুদির দোকান, কাপড়ের দোকান, ছোট দোকানগুলোকে বলা হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা টোকেন কাটতে। যা গত বছর ছিল ৬-৭ হাজার টাকা। (সি) ক্যাটাগরিতে আছে ফার্মেসি, কসমেটিকস ও ইলেকট্রনিক্সের দোকান যাদের ২০ হাজার টাকায় টোকেন কাটতে বলে। যা গত বছর ছিল ৩-৪ হাজার টাকা।
এছাড়া (ডি) ক্যাটাগরিতে আছে পানের দোকান, বিকাশ, মোবাইল, সেলুন, অন্যান্য ছোট দোকান। তাদের বলা হয়েছে ১৫ হাজার টাকায় টোকেন কাটতে। যা গত বছরে ছিল ১০০০-১৫00 টাকা। এসকল ব্যবসায়ীদের অনেকেই তাদের কাছ থেকে নতুন বছরে টোকেন নেয়নি। তাই সকলের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে এবং ১০ জানুয়ারির মধ্যেই দিতে হবে বলে জানিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
এদিকে বাঘাইছড়ি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা সাবেক পৌর প্রশাসক নিজাম উদ্দিন বাবু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিবেদককে জানান, চারটি সংগঠনকে নিয়মিত হারে চাঁদা পরিশোধ করেই এতদিন ব্যবসা করে আসছিল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সম্প্রতি একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে অতিমাত্রায় চাঁদা দাবি করা হচ্ছে যার অংক প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এত টাকা ব্যবসায়ীরা কিভাবে পরিশোধ করবেন সেটি বুঝতে পারছিনা। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে তেলের পাম্প ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি সবুর জানিয়েছেন, আমাদের সমিতির ৭টি তেলের দোকান থেকে আগে নেয়া হতো ৮০ হাজার টাকা, কিন্তু নতুন বছরে ৭ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। আমরা বৈঠক করে এতো টাকা পরিশোধ করতে পারবোনা বলে জানিয়ে দিয়েছি।
তিনি জানান, সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমাদের ব্যবসায়ীরা কয়েকদিন ধরে তেল সংগ্রহ করছেনা। ফলে উপজেলায় জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে
বাঘাইছড়ি উপজেলায় ইউপিডিএফ (মূল) দলের পরিচালক আধিক্কা চাকমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক একটি সংগঠন পরিচালনা করছি। কারো কাছ থেকে আমরা চাঁদাবাজি করিনা। যে বা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও করেছেন তিনি।
বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছি। এই ব্যপারে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। তারপরও বিষয়টির উপর আমরা নজর রেখে সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি।
বাঘাইছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ