চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ একমাস পর অবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) পেলো কাঙ্খিত উপাচার্যের দেখা। চবির ২০তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। তিনি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক। তাঁর নিয়োগের বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) জানা গেলেও প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় সেটি এতদিন কার্যকর হয়নি।
আজ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেটি উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত ছিল।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর ১২(২) ধারা অনুযায়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাময়িকভাবে উপাচার্য পদে নিম্নোক্ত শর্তে নিয়োগ প্রদান করা হলো।
শর্তগুলো হলো- উপাচার্য পদে এ নিয়োগ যোগদানের তারিখ হতে কার্যকর হবে। উপর্যুক্ত পদে তিনি তাঁর অবসর অব্যবহিত পূর্ব পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতাদি প্রাপ্য হবেন। তিনি বিধি অনুযায়ী পদসংশ্লিষ্ট অন্য সুবিধা ভোগ করবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন এবং রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজনে যেকোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের পরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ, মানববন্ধন থেকে কয়েকদফা সময় বেঁধে সরকারকে আল্টিমেটামও দেয়া হয়। এরপরও উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। পরে প্রজ্ঞাপন হওয়ায় বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।
শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই মনে করছেন চবির শিক্ষক রাজনীতির মারপ্যাঁচে আটকে ছিল উপাচার্য নিয়োগ। শুরু থেকে উপাচার্য, সহ-উপাচার্যের দৌঁড়ে যারা এগিয়ে ছিলেন সেখানে দেখা যায়নি অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়ার আখতারের নাম। আলোচনায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন বিএনপি- জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল সমর্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। এর বাইরে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হুসাইন, বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এস. এম নসরুল কাদির, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-আমীন, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল্-ফোরকানের নাম গত এক মাস ধরে বিভিন্ন সময় শোনা গেছে। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে গত সপ্তাহেই সামনে আসে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইয়াহ্হিয়া আখতারের নাম।
অপ্রত্যাশিতভাবে বর্ষীয়ান এই শিক্ষকের উপাচার্য হবার খবরে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ এবং ছাত্র শিবির তৎপর হয়ে উঠে ড. ইয়াহ্হিয়াকে আটকাতে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই এই শিক্ষককে চাওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। এতে প্রজ্ঞাপন কিছুটা দেরি হলেও কুচক্রীমহল সফল হতে পারেনি বলে মত বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের।
জানতে চাইলে ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার ‘চাটগাঁ নিউজ’কে বলেন, এখানে ভিসি হওয়া বা না হওয়া বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আমি কোথাও তদবির করিনি। শিক্ষার্থীরা আমাকে ভালোবাসে তাই হয়তো তারা আমার নাম প্রস্থাব করেছে। আমি তাদের এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতদূর সম্ভব এগিয়ে নিতে চাই। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ