অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান চাটগাঁইয়া পোয়া ইউনূস

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সন্তান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হলো নতুন এই সরকার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ওই সরকার দায়িত্ব পালন করবে।

বুধবার (৮ আগস্ট) রাত ৯টায় বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সহ ১৭ উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

এর আগে মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ জন সমন্বয়কের চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এক নজরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ড. মুহাম্মদ ইউনূস সামাজিক উদ্যোক্তা, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজের নেতা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্রবিত্ত ধারণার প্রবর্তনের জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।

তিনি বেশ কয়েকটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছেন। ২০১২ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হন। এই পদে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। তিনি তার অর্থনৈতিক কাজের ওপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করেছেন। ইউনূস ১৯৯৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের কার্যক্রমকে সমর্থনকারী জনহিতকর সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ড. ইউনূস জাতীয় ও আন্তর্জাতিকসহ ১৪৫টি পুরস্কার অর্জন করেন।

মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন ব্রিটিশ-ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কাটে গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পূর্ব পাকিস্তানের ৩৯ হাজার ছাত্রের মধ্যে ১৬তম স্থান অধিকার করেন। যখন ইউনূস চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করছিলেন, তখন তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হন।

১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে বিএ এবং ১৯৬১ সালে এমএ সম্পন্ন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। এরপর তিনি ব্যুরো অব ইকোনমিক্সে গবেষণা সহকারী হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করেন।

১৯৬৫ সালে তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি লাভ করেন। ইউনূস বাংলাদেশে ফিরে আসার আগে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের পক্ষে বিদেশে জনমত গড়ে তোলা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদানের জন্য সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন এবং বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন।

ইউনূস দরিদ্রতার বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম শুরু করেন ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত দুর্ভিক্ষের সময়। ওই সময় তেভাগা খামার প্রতিষ্ঠা করেন যা সরকার প্যাকেজ প্রোগ্রামের আওতায় অধিগ্রহণ করে। তিনি ১৯৯৬ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন গরিব বাংলাদেশিদের মধ্যে ঋণ দেওয়ার জন্য। মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে এই পুরস্কার লাভ করেন।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top