তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে দলে দলে চট্টগ্রাম ছাড়ছেন নেতাকর্মীরা
বিএনপিতে ঈদের খুশি

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক:  বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চলছে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ উৎসব। এই উৎসবের ছোঁয়া যেন চট্টগ্রামে একটু বেশিই লেগেছে। গত মঙ্গলবার থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বরণ করতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী হয়েছেন দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এদিন দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারেক রহমানকে বহনকারী উড়োজাহাজটির অবতরণের কথা আছে। বিএনপির পক্ষ থেকে রাজধানীর ৩০০ ফুট এলাকায় তারেক রহমানকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে।

তাইতো বাস, ট্রেন, মাইক্রোবাস কিংবা ব্যক্তিগত যানবাহন- যে যেভাবে পারছেন দলে দলে চট্টগ্রাম ছাড়ছেন নেতাকর্মীরা। নেতাকে একনজর দেখার জন্য উদগ্রীব একেবারে ওয়ার্ড-ইউনিটের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরাও।

দলীয় সূত্র বলছে, মহানগরী, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা মিলিয়ে ৫ লাখেরও বেশি নেতাকর্মী রাজধানীর উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছেড়েছেন। সংগঠিত বহরের পাশাপাশি অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেও ঢাকায় পৌঁছে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য।

দলীয় নেতারা জানান, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণার পর থেকেই বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে চট্টগ্রামের প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্মরণকালের সেরা সংবর্ধনা দিতে দলীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে নেতাদের দাবি। মহানগরী থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কর্মীরা এই দিনের অপেক্ষায় রয়েছেন।

এদিকে চট্টগ্রাম-৫ আসনে মনোনয়ন পাওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের অনুসারী হাটহাজারী উপজেলার হাজারো নেতাকর্মী ১৩০টি বাস, ৫০টি মাইক্রোবাস ভাড়া করে বুধবার দুপুরে রওনা দিয়েছেন ঢাকার উদ্দেশে। রাত ১২টায় ভাড়া করা আরও একটি ট্রেনে হাটহাজারীসহ বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা যাবেন বলে জানা গেছে।

মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরী, উত্তর ও দক্ষিণে বিএনপির তিনটি ইউনিট। এই তিন ইউনিট থেকে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী মিলিয়ে অন্তত তিন থেকে পাঁচ লাখ লোক ঢাকায় যাচ্ছেন। অনেকে পৌঁছে গেছেন। অনেকে রাস্তায় আছেন। আর চট্টগ্রাম বিভাগ হিসেব করলে মোট ১০টি ইউনিট। নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা- এসব জেলা থেকে ভাড়া করা গাড়িতে নেতাকর্মীরা যাচ্ছেন। বিভাগ থেকে সব মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি লোক ঢাকায় জমায়েত হবেন বলে আমাদের ধারণা।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত শওকত আজম খাজা বলেন, তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে নগর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে একটি করে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি রেলপথেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। মহানগর বিএনপির ব্যবস্থাপনায় গোধূলী এক্সপ্রেস থেকে চারটি বগি, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস থেকে তিনটি বগি, ওয়ান-আপ ট্রেনের পুরো সেট, তূর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেস থেকে তিনটি বগি এবং কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী ট্রেন থেকে অতিরিক্ত আটটি বগি ভাড়া নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, আমরা মহানগর থেকে ১৫ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। তবে অনেকে আরও আগেই ঢাকায় পৌঁছে গেছেন। আমরা নিজ দায়িত্বে অনেককে চলে যেতে বলেছি। শতাধিক বাস ও মাইক্রোবাস নিয়ে আমরা রওনা দিয়েছি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, যাত্রীদের চাপ বিবেচনায় নিয়ে ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হয়েছে। পাশাপাশি বুধবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে একটি স্পেশাল ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে এক-এগারো পরবর্তী জরুরি অবস্থার সময় নির্যাতনের শিকার হয়ে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান। প্রায় দেড়যুগ সেখানে অবস্থান করেই বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। দলকে টেনে তুলে সুসংগঠিত করে অবশেষে ফিরে আসছেন।

দেড়যুগ পর দেশের মাটিতে পা রাখার পর তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে দলটির নেতাকর্মীদের আয়োজনের শেষ নেই। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ‘বিএনপির ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত। এ চট্টগ্রামেই শাহাদাত বরণ করেছেন জিয়াউর রহমান। এর ফলে জিয়াপুত্রকে ঘিরে দলটির নেতাকর্মী তো বটেই, সাধারণ সমর্থকদেরও বিশেষ আবেগ সবসময় দেখা যায়।

সব মিলিয়ে তারেক রহমানকে বরণ করতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী এই যাত্রা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি করেছে। দলীয় নেতাদের মতে, এটি শুধু একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ নয়, বরং দলের প্রতি আনুগত্য ও নেতার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top