চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চীনের বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তৈরি ১ লাখ ১৪ হাজার ডিডব্লিউটি (ডেডওয়েট টনেজ) ক্ষমতাসম্পন্ন একটি জাহাজের দাম প্রায় ৬ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। অথচ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) সেই জাহাজ কিনছে ৭ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারে। ৮০ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজের দাম প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বিএসসি সেই জাহাজ কিনছে ৪ কোটি ৪ লাখ মার্কিন ডলারে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি জাহাজ কেনার জন্য চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে চুক্তি করে বিএসসি। চারটি জাহাজ কিনতে প্রায় ৪১৭ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়। কমিশন বাণিজ্যের কারণে চুক্তির সময় জাহাজগুলোর দাম বেশি ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ। আর এসব করা হয়েছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরীর নির্দেশে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুদক ও বিএসসি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর ২ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকায় চারটি জাহাজ কেনার জন্য চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে চুক্তি করে বিএসসি।
চুক্তি অনুসারে, চীনের জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দুটি করে অপরিশোধিত তেল পরিবহনের জন্য মাদার ট্যাংকার ও মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার সরবরাহ করবে। প্রতিটি জাহাজের দাম বাজারদরের চেয়ে প্রায় এক কোটি ডলার বেশি ধরা হয়েছে। দুদকে কমিশন বাণিজ্যসংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছে। কমিশন অভিযোগটির যাচাই শেষে চলতি বছর ৮ এপ্রিল অনুসন্ধানে নামে। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আসিফ আল মাহমুদ ও উপসহকারী পরিচালক মিজানুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল অভিযোগটির অনুসন্ধান করছেন।
দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযোগসংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চেয়ে বিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু রেকর্ডপত্র দুদকে এসে পৌঁছেছে, যেসবের পর্যালোচনা চলছে।’
দুদকের কাছে থাকা অভিযোগে বলা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিটি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকারের (আফরাম্যাক্স) দাম পড়ছে ৭ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। আর ৮০ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজের (প্যানাম্যাক্স) দাম পড়ছে ৪ কোটি ৪ লাখ ডলার। চারটি জাহাজ কিনতে খরচ হবে ২৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার বা ২ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। এ টাকার পুরোটাই চীন সরকার ঋণ হিসেবে দেবে। বিএসসি ২০২৬ সাল নাগাদ জাহাজগুলো হাতে পাবে। বাংলাদেশ সরকার এ ঋণ পাঁচ কিস্তিতে পরিশোধ করবে।
অভিযোগে বলা হয়, চীনের বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তৈরি জাহাজের দাম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সিএমসির জাহাজের দাম বেশি ধরা হয়েছে। ২০২৩ সালে সে দেশের কার্যাদেশ নেওয়া কয়েকটি জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তৈরি ৮০-৮২ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজের দাম ৩ কোটি ২০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশের ক্রয়াদেশ দেওয়া জাহাজগুলোর দামের চেয়ে প্রায় এক কোটি ডলার কম। আর ১ লাখ ১৪ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতার ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকারের (আফরাম্যাক্স) দামও অন্য কোম্পানির দামের চেয়ে প্রতিটিতে এক কোটি ডলার বেশি। জাহাজ কেনায় সব মিলিয়ে ৪ কোটি ডলার বেশি দাম দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে জাহাজ কেনার বিষয়ে ঋণ পেতে চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে বিএসসি। প্রথমে ১ লাখ ১৪ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতার তিনটি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার এবং ৮০ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতার তিনটি মাদার বাল্ক জাহাজ কেনার কথা ছিল। বিএসসি ও সিএমসি আলোচনার ভিত্তিতে চারটি জাহাজ কেনার বিষয়ে একমত হয়। এরপর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয় এবং ২০২৩ সালের এপ্রিলে ২ হাজার ৬২০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।
জানা গেছে, জাহাজ কিনতে ২ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা ঋণ দেবে চীন সরকার। এ ঋণ পরিশোধের সময় ১৫ বছর। এর মধ্যে চার বছর গ্রেস পিরিয়ড। ঋণের সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ






