চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: গত কয়েক মাস স্থগিত থাকার পর পুনরায় বিভিন্ন সেবাখাতে ৪১ শতাংশ হারে বাড়ানো মাশুল (ট্যারিফ) আদায়ের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে সৃষ্ট আইনি জটিলতাও কেটে গেছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে রোববার (৩০ নভেম্বর) বর্ধিত মাশুল আদায় কার্যকরের বিষয়ে নোটিশটি জারি করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, বর্ধিত মাশুল আদায়সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া ৩০ দিনের স্থগিতাদেশ আপিল বিভাগ স্থগিত করেছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সব ধরনের ট্যারিফ আদায়ের বিষয়টি মিমাংসিত।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ মেরিটাইম ল সোসাইটি (বিএমএলএস) চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ট্যারিফ কাঠামো বাস্তবায়নের সার্কুলারকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে। ৯ নভেম্বর হাইকোর্ট ট্যারিফ বাস্তবায়ন স্থগিত করে এবং ট্যারিফ বৃদ্ধির সার্কুলার কেন বাতিল করা হবে না তা ব্যাখ্যা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি রুল জারি করেন।
বিএমএলএস সভাপতি মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জানান, আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের পূর্ববর্তী আদেশ স্থগিত করেছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৫২টি খাতে মাশুল আদায় করা হয়। সম্প্রতি ২৩টি খাতে মাশুল বাড়ানো হয়েছে ৪১ শতাংশ হারে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বর্ধিত ট্যারিফ আদায়ের পরিপত্র জারি হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের তীব্র আপত্তির মুখে নৌপরিবহণ উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে সেটা একমাস পিছিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা সব জাহাজ, কনটেইনার ও কার্গো বিল নতুন রেট অনুযায়ী নেওয়া হবে এবং একইভাবে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিসহ সকল বন্দর ব্যবহারকারীরা বর্ধিত হারে মাশুল পরিশোধ করবেন বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এরপর বন্দর ব্যবহারকারীরা আদালতের দ্বারস্থ হন।
বর্ধিত মাশুলেরর প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সবচেয়ে বেশি মাশুল বেড়েছে কনটেইনার পরিবহন খাতে। প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা থেকে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা বেড়ে নতুন মাশুল দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা। এই হিসেবে প্রতি কনটেইনারে মাশুল বেড়েছে গড়ে ৩৭ শতাংশ।
আবার কনটেইনারবাহী জাহাজের ক্ষেত্রে আমদানি কনটেইনারের জন্য ৫ হাজার ৭২০ টাকা ও রফতানি কনটেইনারের জন্য ৩ হাজার ৪৫ টাকা মাশুল বেড়েছে। প্রতিটি কনটেইনার ওঠানামার ক্ষেত্রে মাশুল বাড়ানো হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। কনটেইনারের প্রতি কেজি পণ্যের জন্য মাশুল আগের ১ টাকা ২৮ পয়সার সঙ্গে আরও ৪৭ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। সার্বিকভাবে শুধুমাত্র ওঠানামাসহ কনটেইনার পরিবহণ খাতেই মাশুল বেড়েছে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জাহাজের ওয়েটিং চার্জ বেড়েছে ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় ১০০ শতাংশ। কোনো জাহাজ নির্ধারিত সময়ে ভিড়তে না পারলে অর্থাৎ ওয়েটিং টাইম ১২ ঘণ্টার বেশি হলে ১০০ শতাংশ, ২৪ ঘণ্টার জন্য ৩০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টার জন্য ৪০০ শতাংশ এবং ৩৬ ঘণ্টার বেশি হলে অতিরিক্ত চার্জ ৯০০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। জাহাজের পাইলর্টিং চার্জ ৮০০ মার্কিন ডলার এবং প্রতিবার জাহাজ টেনে আনার টাগ চার্জ ৬ হাজার ৮৩০ ডলার পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ






