মহেশখালী প্রতিনিধি : কারিগরি ত্রুটির কারণে পাঁচ দিন ধরে বন্ধ কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীর কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট। এর ফলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমেছে।
জানা গেছে, জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’। প্রকল্পের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাপানের সুমিতোমো-তোশিবা-আইএইচআই করপোরেশন (এসটিআইসি)। ২০২২ সালের ২৯ জুলাই ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট চালু হয়। দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয় ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর। শুরুর দিকে দুটি ইউনিট থেকে কয়েকবার সর্বোচ্চ ১ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু ২০ নভেম্বর বিকেল থেকে হঠাৎ একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল চারটা পর্যন্ত ওই ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, ইউনিটটি চালু হতে বেশ কয়েক দিন সময় লাগবে। তবে অপর ইউনিট থেকে গতকাল সোমবার বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৩৯০ মেগাওয়াট।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেওয়ার মেরামতের জন্য একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। সম্ভবত বয়লারে ছাই জমার কারণে এমনটি হয়েছে। ছাই পরিষ্কার করে আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে এই ইউনিট থেকে পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে। সর্বশেষ ২০ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়।
তবে এ নিয়ে যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন জেলার সুশীল সমাজের সদস্যরা। কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিজ ফোরামের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযুক্ত কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড একাধিকবার প্রকল্পে অভিযান চালিয়ে প্রকল্পের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়েক কোটি টাকার বৈদ্যুতিক তার জব্দ করেছিল। প্রকল্প থেকে জাহাজে ভরে বৈদ্যুতিক তার চট্টগ্রাম পাচার করা হচ্ছিল। এখন ব্যয়বহুল প্রকল্পের একটি ইউনিট কেন বন্ধ হলো তার তদন্ত হওয়া দরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি মাস থেকে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বয়লারে ছাই জমার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে আসছিল। কেন্দ্রে ন্যূনতম ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা থাকলেও হয়েছে ৫০ শতাংশের কম। ফলে ঘণ্টাপ্রতি মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে ৪৮ লাখ ৪০ হাজার মেগাওয়াট। যার ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা।
প্রকল্পের দেওয়া তথ্যমতে, একটি ইউনিট থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে লাগে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। আর দুই ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দরকার অন্তত ১০ হাজার থেকে সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। কয়লার সংকটের কারণেও বিদ্যুৎ উৎপাদন মাঝেমধ্যে কমিয়ে আনা হয়। কয়লার সংকটের কারণে এখন একটি ইউনিট থেকে ৩৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার সংকট নেই জানিয়ে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী মুহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, প্রকল্পের চাহিদা পূরণে নিয়মিত কয়লা আমদানি হচ্ছে। প্রকল্পের অবকাঠামোগত নির্মাণকাজও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রযুক্তিগত সমস্যা দূর এবং বন্ধ ইউনিটের চালু করতে জাপানের প্রকৌশলীরা শিগগিরই কাজ শুরু করবেন।
চাটগাঁ নিউজ/হোবাইব/এসএ






