সরোজ আহমেদ : ভূমিকম্পের ফল্ট বা চ্যুতিরেখায় রয়েছে চট্টগ্রাম, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার। ফলে এই অঞ্চলে প্রায়ই ছোট ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে। এসব ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের আভাস বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর ২ লাখ ভবনের মধ্যে প্রায় দেড় লাখই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। রিখটার স্কেলে ৭.৫ বা তার চেয়ে অধিক মাত্রার ভূমিকম্প হলে চট্টগ্রাম শহরে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।
আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে চট্টগ্রামে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর স্থায়ীত্ব ছিল ২৬ সেকেন্ড। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) মাত্রা দেখিয়েছে ৫ দশমিক ৫। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদীতে, ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। এতে চট্টগ্রামে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও নগরের মনসুরাবাদ এলাকায় পাঁচ বছর আগে ভূমিকম্পে কিছুটা হেলে পড়া একটি ছয়তলা ভবন আজকের ভূমিকম্পের পর আরও হেলে পড়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীর সংলগ্ন অধিকাংশ বৃহদাকার স্থাপনাই গড়ে উঠেছে বেলে মাটির ওপর যেখানে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, শাহ আমানত বিমানবন্দর, ইস্টার্ন রিফাইনারিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। কোনো পেট্রোকেমিক্যাল স্থাপনায় আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। নগরীর বিভিন্ন অপ্রশস্ত সড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অনেক ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলা করাও কঠিন কাজ।
বড় ভূমিকম্পে কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত শতবছরের প্রাচীন কালুরঘাট সেতু ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে নগরীর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরেশিয়ান প্লেট পাশে থাকায় কক্সবাজার জেলা ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বড় ভূমিকম্প বা সুনামির সময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
চট্টগ্রামের বেসরকারি ইউএসটিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা ভবনসমূহের শক্তি বাড়ানোর জন্য নিয়মিত অ্যাসেসমেন্ট করার পরামর্শ দেন। এছাড়া তিনি ভবনের নকশা অনুমোদন থেকে নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিডিএকে তদারকির পরামর্শ দিয়ে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিম ছাড়া কলাম ও স্লাব বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। নিচের তলাগুলোতে বাণিজ্যিক ও ওপরের দিকে আবাসিক সুবিধা রেখে নির্মিত ভবনগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড-১৯৯৩ অনুসরণ করে ভবন নির্মাণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ভূমিকম্প প্রতিরোধী নিয়মাবলী প্রয়োগ করলে ভবন নির্মাণ খরচ মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
মো. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর ১ হাজার ৩৩টি স্কুলের মধ্যে ৭৪০টি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে। অনেক স্কুলভবনই টেকসই নয়। বিভিন্ন ভবনের নিচের তলায় গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় স্কুল করা হয়েছে। এসব স্কুলকে টেকসই করার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি স্কুল-কলেজে টেকসই আসবাবপত্র তৈরি করা প্রয়োজন যাতে ভূমিকম্পের সময় শিক্ষার্থীরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সেখানে কাঠ-বাঁশ দিয়ে বাড়ি তৈরি করার পরামর্শ দেন তিনি।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ






