চবি ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আলমাস মাহমুদ রাফিদ।

এর আগে বুধবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় রহমানিয়া হোটেলের সামনে মারধরের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাকসু নির্বাচনে (সহসভাপতি) ভিপি পদপ্রার্থী জামাদিউল আউয়াল সুজাত, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদ মোহাম্মদ রিদওয়ান এবং আল মাশরুর ফাহিম, আরিফসহ কয়েকজন।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী রাফিদ উল্লেখ করেন, ১৯ নভেম্বর মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশনে অবস্থানকালে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আল মাসরুর ফাহিম, নূর সানি ও জমাদিউল আউয়াল সুজাত তাকে হুমকি দেন। প্রক্টর অফিসের সামনে থাকা ‘হাদিস মুছে চারুকলা ইনস্টিটিউটের নাম লেখায়’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চারুকলার মানহানি হয়েছে–বিষয়টি নিয়ে চারুকলার মেসেঞ্জার গ্রুপে প্রতিবাদ করায় তাকে টার্গেট করা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।

অভিযোগে আরও বলা হয়, স্টেশন থেকে ভ্যানে করে ২ নম্বর গেটে আসার পর রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে ফাহিম, সানি, সুজাতের সঙ্গে রিদওয়ান (২০১৭-১৮ সেশন), আরিফ (২০২০-২১ সেশন), মেহেদী (২০২০-২১ সেশন) এবং অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ৩০ জন মিলে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালান। হামলাকারীরা ছাত্রদলের মামুন (সদ্য বহিষ্কৃত নেতা) গ্রুপের কর্মী বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এ ঘটনা তদন্তের জন্য এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চবি শাখার কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগ তদন্তের জন্য ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহর নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সূত্রে জানা গেছে, চারুকলা বিভাগের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটে অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী আলমাসের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। পরে অভিযুক্তরা আলমাসকে ইট, কাঠ ও কলাগাছের কাঁদি দিয়ে মারধর করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দাবি, ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাদিউল আউয়াল সুজাত ইট দিয়ে তার মাথা থেঁতলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। হামলায় রক্তাক্ত অবস্থায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদ মো. রিদওয়ান বলেন, ‘চারুকলা ইনস্টিটিউটের কিছু অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলমাসের সঙ্গে তার বিভাগের সিনিয়রদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে মারধর শুরু হয়। আমি শেষ পর্যায়ে গিয়ে সেখানে উপস্থিত হই। এখানে চারুকলার যারা জড়িত তাদের নাম না এসে সংগঠনের (ছাত্রদলের) নাম আসাটা বিব্রতকর। এখানে সংগঠনের ব্যানারে কেউ যায়নি, সম্পূর্ণ চারুকলার বিষয় ছিল।’

অভিযুক্ত আল মাশরুল ফাহিম বলেন, ‘আলমাসের নামে আগে অনেক অভিযোগ রয়েছে, রাফিদের অভিযোগের বিষয়ে একটি তদন্ত চলছে। সে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক সিনিয়রকে নিষেধ করেছিল যাতে তদন্তে তার বিপক্ষে কোনো কথা না বলে। গতকাল ওই সিনিয়রকে পেয়ে স্টেশনে এসব বিষয়ে তর্কাতর্কি করে রাফিদ। পরে ২ নম্বর গেটে সিনিয়ররা এসব বিষয়ে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করলে ও মারধর শুরু করে। পরে আমরা অবস্থানকারী যারা ছিলাম, তারা ওর ব্যবহার দেখে ওকে গণপিটুনি দিই। ওর ব্যাপারে ডিপার্টমেন্টে এসব বিষয় আমরা অভিযোগ দিয়েছিলাম। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে সহকারী প্রক্টর সাইদ বিন কামাল বলেন, ‘আমরা এই সম্পর্কে একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি বোর্ড অব রেসিডেন্স অব হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠানো হবে। সেখান থেকে সব সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top