আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর আসামি সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের সাজা। গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলার রায়।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) এ রায়ের আগে থেকেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো সংবাদ প্রকাশ করে আসছে। রায় ঘোষণার পরপরই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রধান সংবাদ হিসেবে রায়ের খবর প্রকাশ করে।
বিবিসির খবরে ‘আদালতের ভেতর ও বাইরে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর উল্লাস’ শিরোনামে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হতেই আদালতের ভেতর ও বাইরে উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। বাইরে একদল মানুষ দোষীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। আদালতের ভেতরে করতালি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়, এরপর আদালত উপস্থিত সবাইকে শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানায়।
বাংলাদেশের একটি ট্রাইব্যুনাল গত বছরের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অভিযান পরিচালনার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া হাসিনার বিচার হয়েছে অনুপস্থিতিতে। তিনি বর্তমানে ভারতে নির্বাসিত অবস্থায় আছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানের সঙ্গে দণ্ডিত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার এবং তাদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে তারা দোষী সাব্যস্ত হন।
আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ পাঠ করে শোনায় এবং পুলিশের অভিযানে সংঘটিত সহিংসতার ব্যাপকতা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে। ক্ষমতাচ্যুত এ নেতা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জাতিসংঘের হিসাবে এ দমন-পীড়নে শত শত মানুষ নিহত হয়েছিল। বিক্ষোভের শেষ পর্যায়ে হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান, যেখানে তিনি এখনও বসবাস করছেন। বিশেষ একটি ট্রাইব্যুনাল তার অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনা করে। আসামিদের মধ্যে কেবল সাবেক পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আল জাজিরা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’ শিরোনামে নিজেদের প্রধান খবর প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, যা কয়েক মাসব্যাপী বিচার প্রক্রিয়ার পর ঘোষণা করা হলো। গত বছর ছাত্রনেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণঘাতী দমনপীড়ন চালানোর দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
আদালত বলেছেন, গত বছরের ছাত্রবিক্ষোভের সময় সংঘটিত হামলাগুলো ছিল ‘ব্যাপক ও পদ্ধতিগতভাবে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত’। উল্লিখিতভাবে প্রতিবাদকারীদের হত্যা ও গুরুতর আহত করার যে নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছে, তাতে অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উসকানিমূলক আদেশ এবং প্রতিরোধমূলক ও দণ্ডমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার মাধ্যমে অভিযোগ ১-এর অধীনে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।
আদালত আরও বলে, ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা অভিযোগ নম্বর ২-এর অধীনে এক গণনায় মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।
বাংলাদেশের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আদালত জানিয়েছেন, সাবেক পুলিশ প্রধান বিচার কার্যক্রমে সহায়তা এবং ট্রাইব্যুনালকে ‘সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহায়ক বাস্তব প্রমাণ’ দেওয়ায় তাকে শাস্তিতে সহানুভূতি দেখানো হয়েছে।
লাইভ ফুটেজে দেখা যায়, শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হতেই আদালতকক্ষে মানুষ উল্লাস ও করতালিতে ফেটে পড়ে।
রয়টার্স ‘ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর প্রকাশ করেছে।
বেশির ভাগ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে হাসিনার সম্ভাব্য মৃত্যুদণ্ড নিয়ে। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দেখা যায়, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির শীর্ষ পাঁচটি খবরের চারটিই হাসিনার রায় ঘিরেই। দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস, এনডিটিভি, এবিপি লাইভের শীর্ষ সংবাদ হিসেবে রাখা হয়েছে হাসিনার রায়ের খবর।
আন্দোলনে জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছিল। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি বর্তমানে ভারতে নির্বাসনে রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতেই অনুষ্ঠিত এ মামলায় প্রসিকিউশন মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছে। রায়কে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
হাসিনার শাসনামলে বিরোধী মত দমন, বিচারবহির্ভূত আটক ও হত্যার মতো অভিযোগ বহুবার উঠেছিল। কার্যক্রম নিষিদ্ধ তার দল আওয়ামী লীগ ঢাকার এই বিশেষ ট্রাইব্যুনালকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলে দাবি করেছে এবং সমর্থকদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছে—যা দেশে নতুন করে সহিংসতার শঙ্কা বাড়িয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন







