চট্টগ্রামে পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখ জ্বলছে ক্রেতার!

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের বাজারে হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত অক্টোবর মাসজুড়ে খুচরা পর্যায়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল পেঁয়াজ। তবে চলতি নভেম্বর মাসের শুরুতেই প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে দাম। আমদানি না থাকা ও দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর পেঁয়াজের আমদানি খুব বেশি হয়নি। দেশি পেঁয়াজের ওপর বাজার নির্ভর ছিল। অক্টোবর পর্যন্ত বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও এখন তা কমে গেছে। ফলে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে বাজারে আগাম পেঁয়াজ আসা শুরু হতে পারে। তখন দাম কমবে। নভেম্বরে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে।

চট্টগ্রামের বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ হয় দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ আড়ত খাতুনগঞ্জ থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে আকার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯২ থেকে ১০০ টাকার দরে বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগেও দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে। বাজারে এই মুহূর্তে আমদানি পেঁয়াজ নেই বললেই চলে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, বাজারে কোনো আমদানি পেঁয়াজ নেই। দেশি পেঁয়াজ দিয়েই বাজার চলছে। দাম এ মাসে কিছুটা বেশি থাকতে পারে। আমদানির অনুমতি দিলে হয়তো কিছুটা কমবে। নাহয় কয়েক মাসে আগাম পেঁয়াজ এসে যাবে বাজারে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের বাজার মূলত আমদানি পেঁয়াজনির্ভর। দেশে প্রতিবছর যে পেঁয়াজ আমদানি হয় তার অধিকাংশ ভারত থেকে আসে। দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা চট্টগ্রামে তুলনামূলক বেশি। পাশাপাশি পাকিস্তানি, চীনা ও মিসরের পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।

তবে এ বছর চট্টগ্রামের বাজারে ‘রাজত্ব’ ছিল দেশি পেঁয়াজের। আমদানির অনুমতি বন্ধ ও পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হওয়ায় বাজারে আমদানি পেঁয়াজের চাহিদা ছিল না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে দেশে পেঁয়াজ এসেছে ১৩ হাজার টন। গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) একই সময় আমদানি ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার টন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় এবার আমদানি কমেছে প্রায় ৯৫ শতাংশ। দেশের কৃষকদের জন্য এটি ভালো দিক বলে মনে করছেন পাইকারি আড়তদারেরা। তারা বলছেন, কৃষকেরা দাম পাচ্ছেন, পাশাপাশি অন্য দেশের বাজারের ওপর আর দাম নির্ভর করছে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পেঁয়াজের আবাদ ভালো হবে এবারও।

দেশের আমদানি পেঁয়াজের অধিকাংশই ভারতীয়। এ অর্থবছরেও আমদানির ৯৯ শতাংশ এসেছে ভারত থেকে। গত বছর ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়লে দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়। এরপর দেশে উৎপাদন বাড়লে আমদানি অনুমতি (আইপি) বন্ধ রাখা হয়। তবে গত এপ্রিল ও আগস্ট মাসে দাম বাড়লে আইপি দেওয়া হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে চট্টগ্রামে জেলায় পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ৯১ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন ছিল ৬৭১ টন। চলতি অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০২ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৯২ টন। অর্থাৎ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর চট্টগ্রামের পেঁয়াজও এখানকার বাজারে চাহিদা পূরণ করবে।

এদিকে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, দাম বাড়লেও ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ক্রেতারা মানিয়ে নেন। এক লাফে ২০ টাকার বেশি বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আহসান খালেদ বলেন, এক মাস হয়তো দাম একটু বাড়তি। কিছু সার্বিকভাবে কৃষকেরা এবার লাভবান হয়েছেন। আমদানির খবরে বাজারে দাম কিছুটা নেমে আসে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে সামনেই মুড়িকাটা এসে যাবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাবে আবার।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top