ট্রাম্প নয়, শান্তিতে পুরস্কার পেলেন ভেনেজুয়েলার মারিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো।

আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে নোবেল কমিটি এই ঘোষণা দেয়।

এবার নোবেল পুরস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর নামও আলোচনায় ছিল। তিনি নিজেও পুরস্কারটি পাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন মারিয়া কোরিনা মাচাদো।

মারিয়া কোরিনা বর্তমান বয়স ৬০ বছর। তিনি ১৯৭৫ সালের ৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন।

ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে উদ্বুদ্ধ করা এবং দেশটিকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে একনায়কতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক পথে নেওয়ার আন্দোলনের জন্য তাকে নোবেল দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি।

নোবেল কমিটি বলেছে, ‘ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্র আন্দোলনের নেত্রী মারিয়া কোরিনা লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। গভীর বিভাজনে জর্জরিত দেশটির বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের দাবিতেই সকল বিরোধী শক্তি তার নেতৃত্বে এক কাতারে শামিল হয়েছিল।’

ভেনেজুয়েলা একসময় তুলনামূলকভাবে গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল দেশ ছিল। কিন্তু দেশটি এখন এক নির্মম, স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, যা এক ভয়াবহ মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটে ডুবে আছে। হাতেগোনা কিছু সুবিধাভোগী নিজেদের আখের গোছালেও, ভেনেজুয়েলার বেশিরভাগ মানুষ চরম দারিদ্র্যের শিকার। রাষ্ট্র তার হিংস্র দমন-পীড়ন ব্যবহার করছে দেশের সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধেই। এ কারণে প্রায় ৮০ লাখ ভেনেজুয়েলান নিজ দেশ ছেড়েছেন। নির্বাচন কারচুপি, মিথ্যে মামলা আর কারাদণ্ডের মাধ্যমে বিরোধী পক্ষকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ভেনেজুয়েলায় বর্তমানে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানো প্রায় অসম্ভব। তা সত্ত্বেও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে মারিয়া সবসময় তৎপর ছিলেন। তার সাহসী বক্তব্য ‘বুলেট নয়, আমরা ব্যালটকেই বেছে নিয়েছি’ তাকে ব্যাপক আলোচিত করে তোলে। এরপর থেকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে এবং বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানুষের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের পক্ষে অবিরাম লড়াই করে চলেছেন। ভেনেজুয়েলার জনগণের মুক্তির জন্য তিনি বছরের পর বছর ধরে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিরোধী জোটের মনোনীত প্রার্থী হন মারিয়া। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তিনি ভিন্ন দলের প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেজ উররুটিয়াকে সমর্থন জানাতে পিছপা হননি। এরপর রাজনৈতিক মতবিরোধ ভুলে লাখ লাখ স্বেচ্ছাসেবক একজোট হন। নির্বাচন যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়, সেটি নিশ্চিত করতে তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। হয়রানি, গ্রেপ্তার বা অত্যাচারের মারাত্মক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, সারা দেশের নাগরিকরা ভোটকেন্দ্রে কড়া নজরদারি বজায় রাখেন। তারা নিশ্চিত করেন যে চূড়ান্ত গণনা সঠিকভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে, যাতে সরকার ব্যালট নষ্ট করে মিথ্যা ফলাফল ঘোষণা করে জনগণের রায় চুরি করতে না পারে।

গত বছর (২০২৪) পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্বকারী জাপানি সংগঠন নিহন হিদানকিও নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিল। তারা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়তে কাজ করছে।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এ বছর নোবেল পুরস্কারের জন্য মোট ৩৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়ে। এর মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি এবং ৯৪টি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান মনোনীত হয়েছিল।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই। এরপর তার চেয়ে কম বয়সে আর কেউ নোবেল পাননি। অপরদিকে, ১৯৯৫ সালে ৮৬ বছর বয়সে পুরস্কার পেয়েছিলেন জোসেফ রোটব্লাট—যিনি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রবীণ নোবেলজয়ী।

এ ছাড়া এখন পর্যন্ত মোট ৩১টি প্রতিষ্ঠান শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top