সন্দ্বীপ প্রতিনিধি: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সাতজন প্রবাসী নিহত হয়েছেন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বিকেলে দেশটির দুকুম সিদরা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সবাই মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
জানা গেছে, ওইদিন সাগর থেকে মাছ ধরার কাজ শেষে একটি পিকআপ ভ্যানে করে ফিরছিলেন ১১ জন বাংলাদেশি। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ১০ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে সাতজনের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শোকের মাতাম পুরো সন্দ্বীপে
নিহতের খবর জানাজানি হতেই সন্দ্বীপ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। বাড়ি বাড়ি চলছে আহাজারি ও হৃদয়বিদারক দৃশ্য।
সারিকাইত ২ নম্বর ওয়ার্ডের নিহত রকির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা ইব্রাহিম কোলের শিশুকে নিয়ে নির্বাক হয়ে বসে আছেন। চোখের পানি ধরে রাখতে না পেরে বলেন, ঋণ করে ছেলেকে বিদেশ পাঠাইছিলাম, এখন লাশ আনতে হবে।
সারিকাইত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিহত আরজুর বাড়িতে কান্ন করছেন তার মা। স্ত্রী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন তাদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলেও শান্তি ফেরেনি পরিবারে।
মাইটভাঙ্গা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিহত আমিন সওদাগরের বাড়িতেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ডিসেম্বর মাসে দেশে ফেরার কথা ছিল তার। জানুয়ারিতে মেয়ের বিয়ের তারিখও ঠিক হয়েছিল। সব পরিকল্পনা এখন থমকে গেছে। স্ত্রী ও কন্যা সুমাইয়া অপেক্ষায় আছেন প্রিয়জনের মরদেহ দেখার।
পৌরসভা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিহত রনির পরিবারও শোকে স্তব্ধ। সবারই এক দাবি—প্রিয়জনদের মরদেহ যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
প্রশাসনের সহানুভূতি
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মংচিংনু মারমা নিহতদের বাড়িতে গিয়ে তাদের খোঁজখবর নেন এবং প্রাথমিক সহায়তা প্রদান করেন। তিনি বলেন, পরিবারগুলোর পাশে আমরা আছি। মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
সন্দ্বীপ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী নিহতদের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানান। তিনি জানান, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহানুভূতি
এদিকে বিএনপির স্থানীয় নেতারাও নিহতদের পরিবারে গিয়ে শোক প্রকাশ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
মরদেহ ফিরিয়ে আনার দাবি
নিহতদের স্বজনরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের জীবনের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। অন্তত মরদেহগুলো যেন দ্রুত দেশে ফেরানো হয়। তারা সরকারের সহায়তায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
চাটগাঁ নিউজ/ফয়সাল/এমকেএন