আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের বিহারে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের ঝড়ে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজ্যটি।
এর মধ্যেই নতুন করে আলোচনায় এসেছে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যু। বিজেপি ইস্যুটি তুলেছে ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনার প্রেক্ষাপটে। সেই অভিযোগের জবাব দিয়েছেন অল-ইন্ডিয়া ইত্তেহাদুল মুসলেমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।
গত সপ্তাহে পূর্ণিয়ায় এক নির্বাচনী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধী দলগুলোর দিকে অভিযোগের তীর ছুড়ে বলেন, কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ প্রশ্রয় দিচ্ছে। এর জবাবে ওয়াইসি বৃহস্পতিবার জানান, বিহারে কোনো বাংলাদেশি নেই, বিশেষত সীমাঞ্চল এলাকায়, যেখানে আগের নির্বাচনে তার দল বড় সাফল্য পেয়েছিল।
ওয়াইসি বলেন, “মোদীজি বলেন বিহারে বাংলাদেশি আছে। মোদীজি, বিহারে এবং সীমাঞ্চল অঞ্চলে কোনো বাংলাদেশি নেই। তবে আপনার এক বাংলাদেশি বোন দিল্লিতে বসে আছেন। তাকে বাংলাদেশে পাঠান। সীমাঞ্চলে নিয়ে আসুন, আমরা তাকে বাংলাদেশে পৌঁছে দেবো। ”
ওয়াইসির এই কটাক্ষের ইঙ্গিত শেখ হাসিনাকে ঘিরে, যিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগের পর দিল্লিতে আশ্রয় নেন। সেদিন বিক্ষুব্ধ জনতা তার বাসভবন ঘিরে ফেলেছিল।
বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসন বহুদিন ধরেই ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু এবং জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগের বিষয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করার জন্য অভিযান চালানো হয়েছে।
বিহারে এই ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ভোটার তালিকা সংশোধন (স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন—এসআইআর) নিয়ে রাজনীতির কারণে।
নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপকে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, এটি আসলে দরিদ্র ও সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার অজুহাত। তবে কমিশনের দাবি, এই উদ্যোগ নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য। কমিশন নেপালি, বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের নাগরিকদের ভোটার তালিকায় নাম থাকার কিছু প্রমাণও পেয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসের ভাষণসহ বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ প্রসঙ্গ তোলেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর পূর্ণিয়ার সমাবেশে তিনি অভিযোগ করেন, অনুপ্রবেশের কারণে দেশে এক ধরনের ‘জনসংখ্যাগত সংকট’ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, এতে মানুষ তাদের মা-বোনদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট প্রতিটি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে তাড়িয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কংগ্রেস ও আরজেডির দিকে ইঙ্গিত করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “এরা এতটাই নির্লজ্জ হয়ে গেছে যে, বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছে, যাত্রা করছে। এনডিএ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—প্রতিটি অনুপ্রবেশকারীকে বের করে দেবে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি সেই সব নেতাদের, যারা এদের রক্ষা করতে চাইছেন। আমরা তাদের নির্মূল করতে থাকব।’’
এদিকে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছেন, মোদীর এই বক্তব্য আসলে নির্বাচনের আগে মানুষের মনোযোগ অন্য দিকে ঘোরানোর কৌশল। তিনি বলেন, “ধরে নিলাম, বিহারে ‘অনুপ্রবেশকারী’ আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাহলে এতদিন আপনি কী করছিলেন? কেন্দ্রের ক্ষমতায় আছেন ১১ বছর, আর বিহার শাসন করছেন ২০ বছর ধরে।’’
ভারতে চলতি বছরের শেষ বড় নির্বাচনী লড়াই হবে বিহারে। আগামী মাসের মধ্যেই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা হতে পারে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ