চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের আভাস মিলছে। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) এবং সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একীভূত হয়ে এক দলে পরিণত হওয়ার আলোচনা চলছে।
শুধু তাই নয়, নতুন এ দলকে কেন্দ্র করে এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও আপ বাংলাদেশকে নিয়ে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের কথাও শোনা যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, এ বিষয়ে একাধিকবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো দলই প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি। গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, বিষয়টি নিয়ে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে এনসিপির এক নেতা দাবি করেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আলোচনা হয়নি, আবার জিওপির পক্ষ থেকেও কোনো প্রস্তাব আসেনি। তবে যৌক্তিক দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।
রাজনীতিতে এখন নির্বাচনি হাওয়া বইছে। সম্ভাব্য জোট নিয়ে বিভিন্ন দল নানামুখী বিশ্লেষণ ও প্রস্তুতি নিচ্ছে। জানা গেছে, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে একাধিক দলের সঙ্গে এনসিপির ধারাবাহিক বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগোনোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসেই নতুন একীভূত দল ও জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির রাজনৈতিক সূচনা অনেকটা অভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, যা ২০২১ সালে গণঅধিকার পরিষদে রূপ নেয়। অন্যদিকে, ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতাকর্মীদের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি। এনসিপির অনেক নেতারই প্রথম রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মধ্য দিয়েই। তাই নুরকে অনেকেই তাদের রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মানেন। বর্তমানে গণঅধিকার পরিষদ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেলেও এনসিপি এখনো তা পায়নি।
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আরও কিছু দল যুক্ত হতে পারে। আগামী মাসে এ বিষয়ে স্পষ্ট কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে।”
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সম্প্রতি এক হামলায় আহত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করলে একীভূতকরণ ও জোট গঠনের বিষয়ে আরও অগ্রগতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন জিওপির নেতারা।
এবি পার্টির এক নেতা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর ঐক্য নিয়ে বহুমাত্রিক আলোচনা চলছে। একীভূত হওয়ার পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক জোট গঠনের কথাও উঠেছে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনর এক নেতা বলেন, “একীভূত না হলেও ইস্যুভিত্তিক জোটের প্রস্তাব এসেছে। এ নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে, এবং বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে।”
আপ বাংলাদেশর একজন শীর্ষ নেতা জানান, এনসিপির সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। একীভূত না হলে জোটবদ্ধভাবে অগ্রসর হওয়ার বিষয়েও কথা হয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “রাজনীতিতে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা সব সময়ই হয়। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অনেকেই আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। এজন্য বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে কীভাবে দেশ ও জাতির কল্যাণে একসঙ্গে কাজ করা যায়। তবে একীভূত হওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন ইস্যুতে অনানুষ্ঠানিক আলাপ হয়েছে। এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি।”
সব মিলিয়ে, দেশের রাজনীতিতে নতুন একীভূত দল ও জোটের সম্ভাবনা নিয়ে জোর গুঞ্জন চলছে। আগামী মাসে পরিস্থিতি স্পষ্ট হলে জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ