স্মৃতিমাখা ডাকবাক্স আজ শুধুই ইতিহাস!

আনোয়ার হোসেন ফরিদ, ফটিকছড়ি : মূলত সভ্যতার শুরুতেই মানুষ যোগাযোগের গুরুত্ব উপলদ্ধি করেছিল। সভ্যতার শুরুতে যোগাযোগের জন্য মানুষ নানা উপায় অবলম্বন করতো। চাণক্যের অর্থশাস্ত্রেও দূত মারফত রাজস্বের সংবাদ আদান প্রদানের নিদর্শন পাওয়া যায়। সেই সময় কবুতরের মাধ্যমে রাজকীয় পত্র পাঠানো হতো। জমিদাররা বাহকের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করত। তবে কাগজ আবিষ্কারের পর চিঠি লেখার শুরু থেকে তা এই আধুনিক যুগেও ছিল জনপ্রিয় মাধ্যম।

চিঠির জনপ্রিয়তা কমেছে খুব বেশি বছর হয়নি। সেই সাথে কমেছে ডাকবাক্সেও গুরুত্ব। লাল রঙের ডাকবাক্স, ডাকঘর, ডাকপিয়ন বা ডাক-হরকরা এবং তাদের বিলি করা চিঠি আজকের যুগে খুব প্রয়োজনীয় না হলেও একসময় মানুষের যোগাযাগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।

এক সময় চিঠিই ছিল মানুষের আবেগ, যোগাযোগ আর ভালোবাসার একমাত্র ভরসা। চিঠি আসবে বলে কারো বুক ধড়ফড় করত, কেউ আবার অপেক্ষায় থাকত প্রিয়জনের হাতের লেখা দেখতে। সেই হলুদ খাম খুলে পড়ার সময় বুকের ভেতর যে শিহরণ জাগত, তা হয়তো আজকের প্রজন্ম কল্পনাও করতে পারবে না। এ যুগের ছেলেমেয়েরা হয়তো এসব শব্দের সাথে খুব পরিচিত না। কারণ এ যুগটাই আমাদের এসব শব্দ থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছে। যুগটা যে বিজ্ঞানের। আধুনিকতার আলোতে পুরাতন সব স্মৃতিতে ঠাঁই নিয়েছে।

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মনির খানের গাওয়া গান “চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙা ভাঙা হাতে” ছিল সেই সময়ের প্রতিচ্ছবি। স্বামীর কাছে লেখা স্ত্রীর চিঠি, কিংবা দূর প্রবাসে থাকা সন্তানের পাঠানো বার্তা সবকিছুই ছিল যেন আবেগের সোনার খনি। কিন্তু সময় বদলেছে। ইন্টারনেট, মোবাইল, ই-মেইল, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ এসে চিঠির জায়গা দখল করে নিয়েছে। এখন আর ডাকবাক্সে চিঠি জমা হয় না, ডাকপিয়নের ঘণ্টাধ্বনি শুনে বাচ্চারা ছুটে আসে না। পোস্ট অফিসগুলো দাঁড়িয়ে আছে নিস্তব্ধ, যেন ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারীসহ বিভিন্ন পোস্ট অফিসে গেলে দেখা যায়, পোস্ট মাস্টার ও কর্মচারীরা নিয়মিতই বসে আছেন, কিন্তু নেই সেই ভিড়, নেই কোলাহল। সরকারি কাগজপত্র বা কিছু নির্দিষ্ট চিঠি ছাড়া আর তেমন কিছু আসে না। মানুষ আজ স্বেচ্ছায় ছুটছে কুরিয়ার সার্ভিসের দিকে, যদিও খরচ সেখানে কয়েক গুণ বেশি।

তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আজ জানে না পোস্ট অফিস কোথায়, কিংবা ডাকবাক্সের কাজ কী। কারণ, তাদের পৃথিবী এখন ডিজিটাল—বার্তা পৌঁছে যায় কয়েক সেকেন্ডে, ছবি বা ফাইল ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই। হয়তো একদিন ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।

বাংলাদেশে একসময় চিঠি পাঠানোর জন্য ডাকবাক্স ছিল, ডাকপিয়ন আসত নিয়ম করে। মানুষ অপেক্ষা করত একটি হলুদ খামের জন্য। কিন্তু যারা সেই দিনগুলো দেখেছেন, তাদের স্মৃতিতে চিরকাল বেঁচে থাকবে ডাকবাক্স, ডাকপিয়নের সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি, আর প্রিয়জনের হাতের লেখা চিঠির আবেগ।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top