বান্দরবান প্রতিনিধি: কোন মতেই থামানো যাচ্ছে না সীমান্তের চোরাচালান কারবারিদের। মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত ঢুকছে ইয়াবা, সিগারেট, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। তাছাড়াও এদিক থেকে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, ভোজ্য তেল, নির্মাণসামগ্রী এবং কীটনাশক-সার।
এদিকে উপজেলার সোনাইছড়ি, ঘুমধুম ইউনিয়নসহ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রায় ৩ শতাধিক উপজাতি যুবক আরাকা আর্মিতে যোগ দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আরাকান আর্মির উদ্দেশ্য হচ্ছে সীমান্তে তাদেরকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মাদক, ইয়াবা, সিগারেট, ফেন্সিডিল, স্বর্ণ ও গরু চোরাচালান কারবার করানো।
স্থানীয়রা ভয়ে মুখ না খুললেও পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বেশ কয়েকজন স্থানীয় বলেন, সোনাইছড়ি, ঘুমধুমসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৩শ যুবক আরাকান আর্মিতে যোগ দিয়ে দেশে চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশে ও দেশের নিরাপত্তায় বিষয়টি মারাত্বক হুমকি হিসেবে দাঁড়াবে বলেও জানায় স্থানীয়রা।
ইতোমধ্যে ১১ আগস্ট আরাকান আর্মি থেকে পালিয়ে আসা জীবন তঞ্চঙ্গ্যা নামের একজন অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করছে বিজিবির হাতে। সে নিজেই স্বীকার করেছে যে, সে বাংলাদেশি নাগরিক এবং তার এনআইডি কার্ড রয়েছে। তার বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের গর্জন বুনিয়া গ্রাম। তার পিতার নাম চিংমং তঞ্চঙ্গ্যা। তাছাড়াও ১৭ আগস্ট আরাকান আর্মির সহযোগী উলাই চাকমা এবং নয়ন চাকমা নামের দুইজনকে আটক করেছে বিজিবি, যার মধ্যে একজনের বাড়ি রাঙ্গামাটি এবং অপরজনের বাড়ি মিয়ানমারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় জানায়, সীমান্ত এলাকার উপজাতি যুবকরা আরাকান আর্মিতে যোগ দিয়ে এপারের পরিস্থিতি সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য পাচার করছে তারা। ওপার থেকে মাদকের সরবরাহ পুরোটাই তারা নিয়ন্ত্রণ করছে।
আরেকজন স্থানীয় জানায়, বিজিবির চোখে ফাঁকি দিয়ে তারা (যোগ দেওয়া আরাকান আর্মিরা) সীমান্ত ব্যাপকভাবে বিচরণ করছে। এপারে সাধারণ মানুষ হয়ে ঢুকে আবার ওপারে গেলে আরাকান আর্মির পোশাক পরিধান করে। এভাবেই চলছে তাদের জীবন।
এদিকে চোরাচালানকে কেন্দ্র করে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হচ্ছে সীমান্ত এলাকার অসংখ্য মানুষ। স্থানীয়রা জানায়, অপহরণ, চোরাচালান ও অস্ত্র পাচার, এমনকি সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়াসহ সব কিছুই চলে এখানে। এটি যেন বাংলাদেশের ভেতরে আরেকটি পরাধীন ভূখণ্ড।
স্থানীয়রা আরো জানান, বিগত কয়েক বছরে এই সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানের বিষয় নিয়ে অসংখ্য মানুষ হত্যার স্বীকার হয়েছে, অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে। অনেকেই হয়েছেন স্বামী ও পিতাহারা।
মিয়ানমার সীমান্তের ভিতরে প্রবেশ করে চোরাচালান করতে গিয়ে বিগত এক বছরে অসংখ্য মানুষ হাত-পা বিচ্ছিন্নসহ আহতের ঘটনাও ঘটেছে। এইতো মাত্র কয়েকদিন আগেই সীমান্তে চলাচল করতে গিয়ে একটি হাতিও মাইন বিস্ফোরনে আহত হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, বিগত ১ বছরে সীমান্তে চোরাচালান করতে গিয়ে প্রায় শতাধিক ব্যক্তির হাত-পা বিচ্ছিন্নসহ আহতের ঘটনা ঘটেছে।
তাছাড়াও অরক্ষিত এই সীমান্তে ব্যাপক হাড়ে বেড়েছে মাদকদ্রব্য পাচার। এমন কোন দিন নেই যে মাদক পাচার হচ্ছে না। যদিও বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে সীমান্তের অপরাধ দমনে স্বর্বাত্বক চেস্টা করেই যাচ্ছে তারা।
আরেকজন স্থায়ী বাসিন্দা বলেন, এভাবে খাদ্য ও সার পাচার অব্যাহত থাকলে আমরা দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বো তাতে কোন সন্দেহ নাই। তাই এটি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সীমান্তের বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয় নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল কফিল উদ্দিন কায়েস এবং কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম খায়রুল আলমের সাথে।
তারা বলেন, সীমান্ত এলাকার যুবকরা আরাকান আর্মিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টা অনানুষ্ঠানিকভাবে শুনেছি তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন তথ্য আমাদের কাছে নাই। সেহেতু আপাতত কিছু বলতে পারছি না। তবে সীমান্তে বিজিবি কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সীমান্ত চোরাচালান বন্ধ করতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি।
চাটগাঁ নিউজ/ইলিয়াস/এমকেএন