চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূসকে বাঘের পিঠ থেকে নেমে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় নেতা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সিপিবির চট্টগ্রাম জেলা শাখার ত্রয়োদশ জেলা সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশে তিনি এ পরামর্শ দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এম আকাশ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্রদের ইচ্ছায় অধ্যাপক ড. ইউনূস সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাকে সমর্থন দিয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল আপনি গ্রহণযোগ্য সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের হাতে তুলে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিন।’
‘কিন্তু আমরা দেখলাম, ইউনূস সেই পথে গেলেন না, তিনি অপ্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক দল বানানোর কৌশল নিলেন। বন্দরকে বিদেশিদের হাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেন। করিডর দেওয়ার উদ্যোগ নিলেন। সংস্কারের নামে সাত হাজার পৃষ্ঠার দলিল রচনা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ স্বৈরাচারের আমলে অনেকদিন ভোট দিতে পারেনি। ইউনূসের কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষ নির্বাচন নিয়ে হতাশ হতে লাগল, নির্বাচন হবে কী হবে না, সেই প্রশ্ন দেখা দিল। প্রশ্ন উঠল ইউনূস কার, কোন অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন?’
অধ্যাপক ইউনূসের লন্ডন যাবার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে বললেন। বোঝা গেল, তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাচন দিতে চান না, চাপে পড়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে, উনি যে বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছেন, সেখান থেকে কীভাবে নামবেন বুঝতে পারছেন না।’
প্রধান উপদেষ্টাকে ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে সিপিবি নেতা এমএম আকাশ বলেন, ‘আপনাকে দিয়ে আর কিছু হবে না। সংস্কার, বিচার নিয়ে আপনার কর্মকাণ্ড মানুষের মধ্যে আশা জাগাতে পারছে না। আপনি বরং তালবাহানা না করে নির্বাচন দিয়ে বাঘের পিঠ থেকে নেমে যান। সেটা আপনার জন্যও মঙ্গল, দেশের জন্য, জাতির জন্যও মঙ্গল।’
আওয়ামী লীগের আপসের কারণে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির উত্থান হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার দেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী পার্টির উত্তরসূরী হলেও তারা মুক্তিযুদ্ধের পতাকা ফেলে দিয়েছিল। রাজাকারদের সঙ্গে আপস করেছিল। এজন্য আজ দেশ রাজাকার-আলবদরদের উল্লাসমঞ্চে পরিণত হয়েছে। এখন তারা ক্ষমতায়ও এসে যেতে চাচ্ছে। পাকিস্তানের মন্ত্রী এসে এ দেশের মানুষকে সবক দেওয়ার দুঃসাহস দেখায়।’
সিপিবি মুক্তিযুদ্ধ আর বাহাত্তরের সংবিধানের প্রশ্নে কোনো আপস করবে না মন্তব্য করে এমএম আকাশ বলেন, ‘রাজাকার-আলবদরদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আমরা রক্ষা করব। এই বাংলাদেশ হবে গরীব, মেহনতি, খেটে খাওয়া মানুষের। পাকিস্তানের ২২ পরিবারের মতো সালমান রহমান আর এস আলমের বাংলাদেশ আমরা চাই না।’
‘শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আমরা এ দেশে সাম্রাজ্যবাদের ঘাঁটি হতে দেব না। আমেরিকা, চীন, ভারত কাউকে ঘাঁটি করতে দেব না। এ দেশের বন্দর, মাটি, মোহনা এ দেশের জনগণ রক্ষা করবে।’
চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহার সভাপতিত্বে ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সদস্য মৃণাল চৌধুরী ও চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ